খেলনা কীভাবে এলো?

খেলনা কীভাবে এলো?

 

 

 পৃথিবীতে কোন খেলনা না থাকলে কেমন হতো? একবার ভাবুন দেখি! বাচ্চাদেরকে সামলানোটা তো মুশকিল হতোই, একইসাথে খেলনাহীন একটা পৃথিবীতে মানুষও হয়তো অনেকটাই বদলে যেতো। আমরা ছোটবেলায় খেলনা দিয়ে খেলে বড় হয়েছি। আমাদের বাবা-মা খেলনা দিয়ে খেলেছেন, খেলছে আমাদের শিশুরাও। মজার ব্যাপার হলো, এই যে চারপাশে এতো খেলনা, ১৮৩০ সালের আগে এগুলো নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা ছিল না কারোরই।

ঠিক সেই সময়েই একটু একটু করে মানুষ খেলনা বানাতে আর সেটাকে বিক্রি করতে শুরু করে। কেমন ছিল তখনকার সেই খেলনাগুলো? আমাদের পরিচিত খেলনাগুলোই বা আসলো কবে, কোথা থেকে? চলুন না, দেখে নেওয়া যাক!

 

সে অনেককাল আগের কথা...

পৃথিবীতে সর্বপ্রথম খেলনা কবে তৈরি করা হয়েছেইলো না কখন মানুষ খেলনা বানানোর দরকার ভেবেছিলো তা জানা নেই। তবে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে এখনো নানান রকম খেলনা খুঁজে পাওয়া যায়। এখন অব্দি খুঁজে পাওয়া এই পুতুলগুলোর মধ্যে সবচাইতে পুরনো খেলনা পুতুলটির বয়স ৪,০০০ বছর। খেলনার নাম কেন খেলনা বা টয় রাখা হয়েছিলো তা সঠিক জানা যায় না। তবে ১৪ শতকে প্রথম খেলনাকে 'খেলনা' নামে ডাকা হয়েছিলো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে এখন আমরা খেলনা বলতে যেটাকে বুঝি সেটা অবশ্য তখন ছিল না। মানুষ সবসময়ই চারপাশের পড়ে থাকা বস্তু নিয়ে খেলতে ভালবেসেছে। প্রথমে সেটা ছিল পাথর, লাঠি ইত্যাদি। পরবর্তীতে এই ছোট্ট ব্যাপারগুলো দিয়েই প্রাচীন সভ্যতাগুলোতে নানানরকম খেলা শুরু হয়েছিলো। খুব পুরনো কিছু সাহিত্য অনুসারে, খ্রিষ্টপূর্ব ৩০১০-১৫০০ অব্দেও ইন্দু উপত্যকার সভ্যতার মানুষেরা বাঁশি, পাখী বা বানরের আকৃতির খেলনা ইত্যাদি দিয়ে খেলতো।

তবে এরপর খেলনায় আসে বড় পরিবর্তন। ১৭৬৭ সালে জিগস' পাজল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে খেলার মোড় ঘুরে যায়। খেলা তখন শুধু খেলা নয়, শেখার মাধ্যমও হয়ে পড়ে। এরপর আসে সাবানের ফেনা দিয়ে বাবল বানানোর খেলা। হুপ, খেলনা ওয়াগন, ঘুড়ি- একে একে এই সবগুলো খেলনা খেলতে শুরু করে মানুষ। তবে সবচাইতে জটিল খেলনা প্রথম তৈরি করে মানুষ ১৮১৭ সালে। সেবার স্যার ডেভিড ব্রিউস্টার ক্যালাইডোস্কোপ তৈরি করেন। তবে তখনো মানুষ বর্তমানে যে বাণিজ্যিক খেলনাকে চেনে সেগুলো আসেনি।

 

কেমন ছিল দোকানে পাওয়া প্রথমদিকের খেলনাগুলো?

খেলনা নিয়ে বড় ধরণের ব্যবসায়িক কার্যক্রমগুলো যখন শুরু হয় তখন বাষ্পচালিত ট্রেন আর জাহাজগুলো মাত্র কাজ শুরু করেছে। এখানে সেখানে তারা পণ্য রপ্তানি করতে শুরু করেছে। সেগুলো করেই প্রথমদিকের খেলনা নির্মাতারা ব্যবহৃত কাঠ, টিন বা লোহা দিয়ে বানানো ঘোরা, সৈন্য আর ছোট ছোট খেলাগুলো পাঠাতেন। পরবর্তীতে চার্লস গুডইয়ার রাবারকে দ্রবীভূত করার পদ্ধতি তৈরি করেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বল, পুতুল ইত্যাদি খেলনা বানানো শুরু হয়।

সেসময়ের বড় ধরণের খেলনা তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতল ছিল ম্যাটেল। বিভিন্ন দেশে খেলনা পাঠানোর কাজ শুরু করে তারা। তাদের বিখ্যাত পুতুলগুলোর মধ্যে সবচাইতে পরচিত পুতুলটির নাম হচ্ছে 'বার্বি ডল'। ম্যাটেল যে শুধু খেলনা তৈরি করতো তা না, একইসাথে খেলনা নিয়ে গবেষণা করে সেগুলোর উদ্ভাবনের লাইসেন্সও নিয়ে রাখতো। তবে তাদের যাত্রাটাও শুরু হয় ১৯৪৫ সালে।

খেলনা আবিষ্কারের সময়টা ঠিক এভাবেই চলে যাচ্ছিলো। তবে ১৯৭০-এর প্রথমভাগে 'পং' নামের এক ভিডিও গেম সবার নজর কাড়ে। আতারি কোম্পানি থেকে নোলান বাশনেল এই খেলা তৈরি করেন। এরপর একে একে 'প্যাক-ম্যান', 'ট্রন', 'স্পেস ইনভেডারস' ইত্যাদি খেলাগুলোর চলে আসে। প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সাথে সাথে এই খেলার ধরণটাও বদলে যায়। তবে জনপ্রিয়তা যেমনটাই থাকুক না কেন, এখনও অব্দি বাচ্চাদের হাতে শোভা পায় সেই বার্বি ডল কিংবা রবারের পুতুল। বিশেষ করে রবারের বল দিয়ে তো আমরা সবাই খেলেছি, এখনো খেলি। খেলনাকে নিয়ে আমাদের এই আগ্রহ যেন কখনোই যাওয়ার নয়!