ছোটবেলার বার্বি ডলঃ কোথা থেকে এসেছিলো বার্বি?

ছোটবেলার বার্বি ডলঃ কোথা থেকে এসেছিলো বার্বি?

আপনার ছোটবেলার খেলনাগুলো কোথায় আছে? মনে পড়ছে না? কিন্তু বার্বি ডল? বার্বির কথা নিশ্চয় মনে আছে আপনার? অন্য খেলনাগুলোর চাইতে একটু যেন আলাদা করেই রেখে দিয়েছিলেন বার্বি ডলকে! এই যে এতো ভালোবাসার খেলনাটি, তার জন্ম কোথায়, কীভাবে হলো তা জানা আছে কি?

১৯১৬ সালে কলোরাডোর ডেনভারে জন্ম নেয় এক ছোট্ট শিশু। বাবা-মা তার নাম দেন রুথ মারিয়ানা মস্কো। ছোটবেলা থেকেই খেলনার প্রতি আকর্ষণ ছিল ছোট্ট রুথের। তবে সবচাইতে এবশি ভালোবাসতেন তিনি নতুন কিছু গড়তে।

নতুন কিছু গড়ার এই চিন্তা থেকেই স্বামী এলিয়ট হ্যান্ডলারের সাথে একটা সময় সম্পূর্ণ নতুন এক পথে, নতুন এক কাজ খেলনা তৈরিকে নিয়ে সামনে এগোতে শুরু করেন রুথ।

এলিয়ট হ্যান্ডলারের সাথে রুথের বিয়ে হয়ে যায় ১৯৩৮ সালেই। এলিয়টের মূল কাজ ছিল হ্যারল্ড ম্যাট ম্যাটসনের সাথে। তাদের ছবির ফ্রেম তৈরির একটি গ্যারাজ ছিল। কিন্তু খুব বেশিদিন যাওয়ার আগেই কোম্পানিতে নিজের সব শেয়ার বেচে দিয়ে চলে যান হ্যারল্ড। ফলে হ্যারল্ড আর এলিয়টের কোম্পানি ‘ম্যাটেল’এর পুরো দায়িত্ব গিয়ে পড়ে এলিয়ট আর রুথ দম্পতির ঘাড়ে।

ছবির ফ্রেম বানানোর পাশাপাশি এই দম্পতি চেষ্টা করে কিছু খেলনা বানাতে। বাচ্চাদের জন্য তৈরি এই খেলনা এতোটাই জনপ্রিয়তা পায় যে, তারা ছবির ফ্রেমের বদলে পুরোটা সময় বাচ্চাদের খেলনা বানানোর কাজেই মন দেন। ‘উকে-এ-ডুডল’ নামের এক মিউজিকাল টয় তৈরি করেন তারা। ম্যাটেলের সবচাইতে জনপ্রিয় প্রথম খেলনা ছিল এই উকুলেলে বাদ্যযন্ত্রটি।

একে একে ‘মিকি মাউস ক্লাব’এর স্বত্ব কিনে নেন এলিয়ট আর রুথ। তৈরি করেন অসম্ভব জনপ্রিয় খেলনা বন্দুক ‘বার্প গান।‘ তবে এসব ছিল শুধুই শুরু। ১৯৫৯ সালে এই দম্পতি ম্যাটেল থেকে এমন এক খেলনা পুতুল তৈরি করেন যেটি পরবর্তীতে পুরো পৃথিবীতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ঠিক ধরেছেন! ম্যাটেলের তৈরি ‘বার্বি ডল’এর কথাই বলছি!

 

বার্বি যেভাবে এলো…

এলিয়ট আর রুথ দম্পতির কোলজুড়ে তখন ছোট্ট একটি মেয়েশিশু জন্ম নেয়। মেয়ে বারবারাকেই একদিন রুথ কাল্পনিক কিছু চরিত্রের সাথে খেলতে দেখেন। বারবারা কাগজ দিয়ে পুতুল বানিয়ে সেগুলোকে নানারকম কাজ দিয়েছিলো। কোন কাগজের পুতুল ছিল ডাক্তার, কোনটি ছিল গায়িকা। মেয়ের এই কল্পনা থেকেই দারুণ এক বুদ্ধি আসে রুথের মাথায়।

এর আগে সুইজারল্যান্ডে পরিবারের সাথে ঘুরতে গিয়ে জার্মানিতে তৈরি ‘বিল্ড লিলি’ নামের এক পুতুলের সাথে দেখা হয় রুথের। যদিও সেটা একজনের সংগ্রহের পুতুল ছিল, রুথ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখেন পুতুলটিকে আর সেই স্মৃতি থেকেই নিজের মেয়ে ও বাকি সব শিশুদের জন্য অন্যরকম এক পুতুল তৈরি করার কথা ভাবেন তিনি।

রুথের কল্পনা আর এলিয়টের পরিশ্রমে তৈরি হয় প্রথম বার্বি ডল। যেটি শুধু দেখতেই মানুষের মতো নয়, বরং কাজেকর্মেও ঠিক মানুষের মতোই। নিউ ইয়র্ক সিটির আমেরিকান টয় ফেয়ারে উদ্বোধন করা হয় বার্বি ডল। খুব দ্রুত এই খেলনা পুতুলটি প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা পায়।

তবে বার্বিকে কখনোই শুধু পুতুল হিসেবে দেখেননি রুথ। বার্বি ছিল রুথের কাছে তার নিজের সন্তানের মতোই। বার্বির জন্য একটা গটা গল্প তৈরি করেন এই খেলনা নির্মাতা। বার্বি মিলিসেন্ট রবার্টস নামের এই পুতুলটির গল্প অনুযায়ী তার জন্ম উইসকনসিনের উইলসে। যেখানে সে একজন কিশোরী মডেল। তবে এরপর একে একে নানান পেশার বার্বি ডল তৈরি করে ম্যাটেল আর তাদের গল্পগুলোও ভিন্ন ভিন্ন রূপ নেয়। গায়িকা, ডাক্তার থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বার্বিও বানিয়েছেন রুথ। বার্বি ডল বানানোর মাত্র দুই বছর পরেই বার্বির ছেলে সঙ্গী কেন ডলকে তৈরি করেন রুথ। এই কেন ডলের নাম তিনি নেন ছেলে কেনেথের কাছ থেকেই।

ম্যাটেলের প্রথম বার্বি ডলের দাম ছিল মাত্র ৩ ডলার। তবে এখন হাজার হাজার ডলার খরচ করে শিশুরা কিনে নেয় এই খেলনাটি। বার্বি কি শুধুই খেলনা? রুথ মনে করেন, বার্বি হলো শিশুদের জন্য আদর্শের মতো। বার্বি শুধু যেকোনো একটি পেশায় নয়, ভিন্ন ভিন্ন পেশায় কাজ করে থাকে। রুথের মতে নানান পেশার বার্বি শিশুদেরকে ছোটবেলা থেকেই ভাবতে শেখায় যে, সে নিজের ইচ্ছানুযায়ী পেশা বেছে নিতে পারে। বার্বিকে শিশুদের চিন্তার স্বাধীনতা প্রদানের মাধ্যম বলে মনে করেন তিনি।

প্রাথমিকভাবে বার্বি ফর্সা গায়ের রঙ আর সোনালি চুলের হলেও পরবর্তীতে একে একে আফ্রিকান-আমেরিকান বার্বি, লাল চুলের বার্বিসহ নানারকম বার্বি তৈরি করেন রুথ পৃথিবীর সব দেশের শিশুর কাছে পৌঁছতে। ১৯৬৫ সালে চোখ বন্ধ করতে পারা এবং পা বাঁকাতে পারা বার্বি ডল নিয়ে আসে ম্যাটেল। ১৯৬৭ সালে কোমর বাঁকাতে পারা বার্বি ডল নিয়ে আসে তারা। তবে যত রকমের বার্বিই তৈরি করুক না কেন কোম্পানিটি, এখন পর্যন্ত তাদের সবচাইতে বেশি বিক্রিত বার্বি ডলটি হলো পা থেকে মাথা পর্যন্ত লম্বা চুলের অধিকারী ১৯৯২ সালের ‘টোটাল হেয়ার’ বার্বি ডলটি।

বার্বির বয়স এখন ৬০-এর ঘরে। প্রায় ১২৫টি পেশায় কাজ করেছে বার্বি। বার্বির মা রুথও এখন আর পৃথিবীতে নেই। তবে তারপরেও পৃথিবীর কোন অংশেই পুতুলটির চাহিদা বিন্দুমাত্র কমে যায়নি। ‘ম্যাটেল’এর মতে এখনও প্রতি মিনিটে প্রায় ১০০টি বার্বি ডল বিক্রি করে তারা। আমাদের বয়স যতই হয়ে যাক না কেন, বার্বি যে আমাদের কাছে সেই ছোটবেলার বার্বি হয়েই রয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই!