শিশুর সাথে কতক্ষণ খেলা করা উচিত?

শিশুর সাথে কতক্ষণ খেলা করা উচিত?

প্রত্যেকটি বাবা-মা নিজের ছোট্ট শিশুটির সাথে সময় কাটাতে, খেলতে পছন্দ করেন। শিশুও বাবা ও মায়ের সঙ্গ পেয়ে খুশি হয়ে ওঠে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ঠিক কতটা সময় শিশুর সাথে বাবা-মায়ের খেলাধুলো করা উচিত?

অনেকেই ভেবে থাকেন যে, শিশুর সাথে যতটা সময় সম্ভব বেশি খেলাধুলো করা উচিত। সত্যি বলতে গেলে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরাও মা ও বাবাকে শিশুর সাথে অনেকটা সময় খেলা করতে বলেছেন। কিন্তু বাস্তবে সেটি একেবারেই সম্ভব নয়। আপনি আপনার শিশুর জন্য ২৪/৭ খেলনা নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন তা হওয়ার নয়।

তবে তারপরেও শিশুর সাথে যথাসম্ভব বেশি সময় কাটানো অভিভাবক ও শিশু- দুজনের মস্তিষ্কেই ইতিবাচক প্রভাব আনবে। গবেষকদের মতে, বাবা-মায়ের সাথে খেলার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে-

নিরাপত্তাবোধ

প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতা

কৌতূহল

শেখার ক্ষমতা ইত্যাদি বেড়ে যায়। তবে এর উল্টোটাও যে হয় না একেবারেই তা নয়।

 

অতিরিক্ত সময় শিশুর সাথে খেলাধুলো করার সম্ভাব্য নেতিবাচক ফলাফলগুলো কী?

যদিও ঠিক কোন সময়ের মানদণ্ডকে অতিরিক্ত বলা হয়েছে তা এখনো পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া যায় না, তবে শিশুর সাথে দিনের পুরোটা সময় খেলার মাধ্যমে নিযুক্ত থাকার ফলে-

১। শিশু তার খেলনা ও সামগ্রিকভাবে খেলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।

২। বাইরে খেলার চাইতে ঘরে খেলতেই শিশু আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে।

৩। আপনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন। শিশুর সাথে খেলার সময়টুকু বাবা-মাকেও সুন্দর কিছু অভিজ্ঞতা এনে দেয়। তবে একজন মানুষের নিজের জন্যও সময় প্রয়োজন হয়। যেটি অতিরিক্ত সময় শিশুর সাথে খেলার ফলে হারিয়ে যেতে পারে।

৪। শিশু আপনার প্রতি প্রচণ্ড নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। খেলার সময় অবশ্যই আপনি আপনার শিশুকে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন সবসময়য়। তবে এই সাহায্য করার মানসিকতাই শিশুকে পরবর্তীতে নিজের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে আপনার প্রতি পুরোপুরি নির্ভরশীল করে তুলতে পারে।

৫। শিশুর সাথে অন্যান্য শিশুদের সামাজিক দূরত্ব তৈরি করতে পারে।

 

কতটুকু সময় তাহলে শিশুর সাথে খেলবেন?

সবশেষে আবার এই প্রশ্নটাই উঠে আসে যে, ঠিক কতটা সময় শিশুর সাথে খেলার মাধ্যমে কাটাবেন আপনি? এখন থেকে কি তাহলে হিসেব করে শিশুর সাথে খেলতে হবে আপনাকে? উঁহু, একদম নয়! শিশুর সাথে আপনার খেলার সময়টুকু পুরোপুরি নির্ভর করবে আপনার উপরে। আপনি ও শিশু ঠিক যতটা সময় একে অন্যের সান্নিধ্যে খেলনাবাটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আনন্দলাভ করবেন ততটা সময়ই খেলবেন। তবে এক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন আপনি-

১। খেলার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে রাখুন

নিজের কাজের সময়সূচী ও শিশুর ঘুমের সময়সূচীকে মিলিয়ে নিয়ে খেলার সময় বের করুন। এতে করে আপনার শিশুর মন যেমন চনমনে থাকবে, আপনিও ভালো থাকবেন।

২। শিশুর জন্য অপেক্ষা করুন

ক্ষুধা পেলে শিশু যেমন আপনাকে খাবারের জন্য ডাকে, তেমনি খেলার ইচ্ছে হলেও সে আপনাকে সংকেত দেবে। আর সেই সংকেতের অপেক্ষা করে ঠিক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে শিশুর সাথে খেলতে পারেন আপনি।

৩। সরাসরি যোগাযোগে আসা থেকে বিরত থাকুন

ব্যাপারটা এমন নয় যে, আপনি আপনার শিশুর ধারে-কাছে যাবেন না। তবে সরাসরি শিশুর সাথে খেলা না করেও আপনি কিন্তু সারাদিন তার ধারেকাছেই থাকতে পারেন, আপনার কাজগুলো গুছিয়ে নিতে পারেন। এতে করে শিশুও আপনার চারপাশে থাকতে পারবে। আর আপনি তার সঙ্গ পাবেন পুরোপুরি।

৪। নির্বিঘ্ন সময় বাছুন

অনেক তো কাজ হলো। শিশুর জন্য যে সময়টুকু রেখেছেন সেটাকে নির্বিঘ নরুন। ফোন বা অন্যান্য কাজ থেকে দূরে রাখুন। সময়টা শুধুই তাকে দিন। সময় কম হলেও এতে আনন্দ থাকবে পুরোপুরি।

 

শিশুর সাথে খেলার জন্য মা বা বাবা হিসেবে আপনি কতটা সময় বরাদ্দ রাখবেন সেটা সম্পূর্ণই আপনার ব্যাপার। সন্তানের সাথে প্রতিটি বাবা-মায়ের সম্পর্কই একদম আলাদা। আপনার শিশুকে আপনার চাইতে কেউ বেশি ভালো বোঝে না। তাই অন্য কারো কথা মনোযোগ না দিয়ে শিশুর সাথে খেলার সময়সীমাটা নিজেই বেছে নিন।