"আপনার শিশুটির ঘ্রাণশক্তি বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার করণীয় কি কি???"

"আপনার শিশুটির ঘ্রাণশক্তি বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার করণীয় কি কি???"

 

 

 

☆ শিশুর ঘ্রাণ শক্তি বিকাশে আপনার করণীয়-

 

একটি শিশুর আট বছর বয়স পর্যন্ত এই ঘ্রাণ শক্তি বিকশিত হতে থাকে। এ বিষয়টিতে আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন এটি নিয়েই আমরা এখন আলোচনা করবো।

 ◆ জন্মগ্রহণের পূর্বেই শিশুকে বিভিন্ন ঘ্রাণের সাথে পরিচিত করিয়ে ফেলুন -

 গর্ভকালীন সময় থেকেই শিশুর স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতার মতোই ঘ্রাণ শক্তিও বিকশিত হতে থাকে। কারণ আপনি এই সময়ে যে খাবার খান তা এমনিওটিক তরলের মাধ্যমে শিশু সে ঘ্রাণ পেয়ে থাকে। তাই এই সময় বিভিন্ন স্বাদ ও ঘ্রাণের খাবার গ্রহণ করুন যাতে শিশু বিভিন্ন ধরনের ঘ্রাণ ও স্বাদের সাথে অভ‍্যস্ত হয়ে যায়।

 

◆ বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুকে নিজে নিপল খুজে নিতে দিন -

শিশুদের নাক যথেষ্ট পরিমাণে সংবেদনশীল হয়। যে কারণে শিশু বুকের দুধের ঘ্রাণ খুব সহজেই চিনতে পারে। আপনি যখন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে যাবেন তখন শিশুকে ঘ্রাণ শক্তির মাধ্যমে নিজেকেই নিপল খুজে নিতে দিন।

 

◆ শিশুকে আপনার ঘ্রাণ নিতে দিন -

শিশুর কাছে যাওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে আপনার শরীরে অতিরিক্ত পারফিউম এর ঘ্রাণ না থাকে। এর মাধ্যমে শিশু আপনার শরীরের ঘ্রাণের সাথে পরিচিত হতে পারবে। আপনি যখন শিশুকে জরিয়ে ধরে আদর করবেন তখন শিশু আপনার ঘ্রাণের সাথে পরিচিত হওয়ার ফলে আপনাদের দুজনের মস্তিষ্কেই অক্সিটোসিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। আর এই হরমোনটি আপনাদের দুজনের মধ্যে একটি চমৎকার ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করে।

 

◆ শিশুকে বেশি বেশি পরিচিত ঘ্রাণ নিতে দিন -

পরিচিত ঘ্রাণ পেলে শিশুরা বেশ শান্ত হয়ে থাকে। প্রাথমিক দিকে শিশুকে যখন একা শোয়ার জন্য দিবেন তখন তার পাশে আপনার একটি জামা রেখে দিন। এতে করে শিশু বেশ শান্ত থাকবে। কেননা শিশু যখন তার আশেপাশে আপনার পরিচিত ঘ‍্রাণটি পাবে তখন ভাববে আপনি ওর পাশেই আছেন। এছাড়াও শিশু তার আশেপাশের জিনিসের ঘ্রাণও চিনে থাকে, যেমন তার কোলবালিশ, চাদর, খেলনা ইত্যাদি।

এছাড়াও শিশু যখন কান্নাকাটি করে তখন তার বাবা মায়ের ঘ্রাণ তাকে শান্ত করতে সাহায্য করে। একই ভাবে পরিচিত জায়গার ঘ্রাণও শিশুকে শান্ত রাখে।

 

◆ ঘ্রাণের মাধ্যমে শিশুকে কোনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিন-

 মস্তিষ্কের একই অংশ দিয়ে ঘ্রাণশক্তি ও স্মৃতিশক্তি পরিচালিত হয়। তাই যে কোনো নির্দিষ্ট ঘ্রাণ শিশুকে নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতার কথা মনে করিয়ে দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রেও ব‍্যাপারটা ঠিক একই রকম। আর তাই অনেক বছর পরে হলেও নির্দিষ্ট কোনো ঘ্রাণ শিশুকে পুরানো কোনো অভিজ্ঞতার কথা মনে করিয়ে দেয়।

 

◆শিশুকে ঘুমানোর সময় তার প্রিয় ঘ্রাণের সঙ্গে রাখুন -

 আপনার শিশুটি যদি তার কোনো নির্দিষ্ট কম্বল বা খেলনার প্রতি আগ্রহী হয়ে থাকে তাহলে তাকে ঘুম পাড়ানোর সময় সেই পরিচিত খেলনা বা কম্বলটি তার আশেপাশে রাখুন। তার এই পরিচিত ও প্রিয় জিনিসটির ঘ্রাণ শিশুকে শান্ত হতে সাহায্য করে। ফলে শিশু সহজেই ঘুমিয়ে যায়।

 আবার এই প্রিয় জিনিসটি ধোয়ার পর শিশুকে দিলে তা যদি শিশুটি নিতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তাতে অবাধ হবার কিছুই নেই। জিনিসটি শিশুর আশেপাশে রেখে দিন। কয়েক দিনের মধ্যেই সে জিনিসটি শিশুর কাছে আবার প্রিয় হয়ে উঠবে।

 

◆ নতুন কোনো ঘ্রাণের সাথে পরিচিত হওয়ার সময় শিশুকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন -

 শিশুর বয়স তিন মাস হওয়ার পর থেকেই শিশু পরিচিত ঘ্রাণ ও অপরিচিত ঘ্রাণ এ বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন হয়ে উঠে। আর তাই ঠিক তখন যদি শিশুর আশেপাশে কোনো অপরিচিত মানুষ আসে তাহলে তখন শিশু বেশ খানিকটা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বা ঘাবড়ে যায়। যার ফলে শিশু কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। এই সময় শিশুকে কথা বলে বা তার মনোযোগ অন‍্যদিকে সরিয়ে নিতে হবে। এভাবে শিশুকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন।

 আপনার কোনো আত্মীয় বা বন্ধু যদি কিছুদিন আপনাদের সাথে থাকে তাহলে তাকে বলুন সে যাতে শিশুর সাথে খুব শান্ত গলায় কথা বলে। ধীরে ধীরে শিশুর সাথে ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করে। শিশুর আশেপাশে থাকে। এবং ওকে যাতে জরিয়ে ধরার চেষ্টা করে। এর মাধ্যমে শিশু নতুন ঘ্রাণের সাথে পরিচিত হয়ে উঠবে। ফলে ঐ ব‍্যক্তির উপস্থিতিতে সে আর উদ্বিগ্ন হয়ে উঠবে না।

 

◆ শিশুকে নতুন খাবারের ঘ্রাণ নিতে দিন -

 শিশুর বয়স ছয় মাস হতে হতেই তার কোন ঘ্রাণটি পছন্দ এবং কোনটি অপছন্দ সেটি প্রকাশ করতে শিখে যায়। আর এজন্যই শিশুকে এই সময় নতুন খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। ওকে নিত্য নতুন শাক-সবজি ও ফলফলাদির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিনিয়ত শিশুকে এমন নতুন খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ফলে শিশু কেবল সেই নতুন ঘ্রাণের সাথেই পরিচিত হয় না। বরং শিশুর একটি চমৎকার খাদ্যাভ্যাসও গড়ে উঠে। যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্যেও অনেক উপকারী।

 

◆ শিশুকে যে কোনো কিছুর ঘ্রাণের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার সময় সেই জিনিসের নাম বলুন -

 

 শিশুকে যখন পরিচিত যে কোনো জিনিসের ঘ্রাণের সাথে পরিচয় করাবেন তখন তাকে জিনিসের নামও বলে দিন। এর মাধ্যমে একই সাথে শিশুর স্মৃতিশক্তি ও ঘ্রাণশক্তি বিকশিত হয়ে থাকে। যার মাধ্যমে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির মাইলস্টোনগুলো খুব দ্রুত অতিক্রম করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারেন।

 

◆ সুইট আলমোন্ড বা ল‍্যাভেন্ডার এই জাতীয় তেল ব‍্যবহার করুন -

 শিশু জন্মগ্রহণের পর যদিও বেশ কিছুদিন পর্যন্ত ঘরের মধ্যে কোনো এয়ার ফ্রেশনার বা সুগন্ধি মোমবাতি ব‍্যবহার করা উচিত নয় তবে শিশুকে শান্ত রাখার জন্য খুব সামান্য ও চমৎকার সুগন্ধি তেল ব‍্যবহার করা যেতে পারে। যেমন সুইট আলমোন্ড বা ল‍্যাভেন্ডার এই জাতীয় তেল শিশুকে শান্ত রাখতে বেশ সাহায্য করে বলেই দেখা গেছে।

 একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নবজাতক শিশুদের এই ধরনের তেল দিয়ে ম‍্যাসাজ করে দিলে বাচ্চারা অনেকটা শান্ত হয়ে থাকে। তবে এটা জানা যায় নেই যে শিশুরা কি ম‍্যাসাজের কারণে শান্ত থাকে নাকি সুইট আলমোন্ড বা ল‍্যাভেন্ডার তেল ব‍্যবহার করার কারণে শান্ত হয়ে থাকে।

 

তবে আপনার শিশুর জন্য যে কোনো এসেনশিয়াল তেল ব‍্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনাকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে এ জাতীয় তেলগুলো সরাসরি শিশুর শরীরের ত্বকের সাথে লেগে না যায়। কেননা কিছু ক্ষেত্রে এ জাতীয় তেলগুলো শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এবং অনেক শিশুর ত্বক আবার এই ধরনের এসেনশিয়াল তেল এর প্রতি সংবেদনশীলও হতে পারে।