" কোন বয়সে কোন খেলনা "

" কোন বয়সে কোন খেলনা "

শিশুরা যেটি দিয়ে খেলে আনন্দ পায় সেটিই তার খেলনা। সেটা হতে পারে শুধুমাত্র ছোট একটি কাগজের টুকরা। খেলনা হতে হবে এমন যা দিয়ে খেলতে খেলতেই সে তার দৈনন্দিন বিষয়গুলোকে শিখতে পারে। তার চিন্তাশক্তির যেন বিকাশ ঘটে। শিশুর খেলনা তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। খেলা একটি কাজ। এর মাধ্যমে চোখ ও হাতের বিকাশ ঘটে। ছোট ছোট খেলা শিশুর সূক্ষ্ম পেশিগুলোর বিকাশ ঘটায়। শিশুর জন্য খেলনা নির্বাচনের সময় খেলনার রং, আকার, আকৃতি, ওজন, শিশুর বয়স, খেলনার জমিন ( খসখসে না মসৃণ ) বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। খেলার মাধ্যমেই শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক ও শারীরিক বিকাশ হয়ে থাকে। যেমন- ছবি আঁকা, মালা গাঁথা, ব্লক দিয়ে কিছু বানানোর খেলা খেললে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। ছড়ার বই, রং করার বই, ছোটদের গল্পের বই এইসবের মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটে। ক্রিকেট, বল, ব‍্যাডমিন্টন, দৌড়াদৌড়ি এইসব খেললে শিশুর শারীরিক বিকাশ ঘটে। যদিও সে এইসব খেলা খেলবে তিন বছর বয়সের পর থেকে।

 যেগুলো দেখে শিশু হাসে সেটাই তার জন্য খেলা। শিশুর খেলা শুরু হয় হাত পা নাড়া দিয়ে। সে মায়ের দিকে তাকিয়ে হাত পা নাড়ে, আঙুল চোষে এটাই তার জন্য খেলা। কিন্তু খেলার ক্ষেত্রে শিশুর বয়সের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। ছয় মাসের শিশুকে একটি সাইকেল এনে দিলেই সেটি শিশুটিকে মোটেও আকর্ষণ করবে না। কারণ সেটি সে চালাতেই পারবে না। এমন ঘটলে তার বিকাশ তো ঘটবেই না বরং কোন দুর্ঘটনা ঘটার ভয়ও থাকবে।

 

◆ আপনার ছোট্ট শিশুটির জন্য কোন খেলনা বেছে নিবেন?

 ▪প্রথম এক বছর পর্যন্ত বাচ্চারা কীভাবে খেলে-

জন্মের পর প্রথম এক বছরের খেলাটা মূলত অনুসন্ধান বা পরীক্ষামূলক ব‍্যাপার হিসেবেই অভিহিত করা হয়। বাচ্চার চারপাশের পরিবেশের প্রতি তাদের অনুভূতি ও ইন্দ্রিয় গুলোর ব‍্যবহার করতে শিখে। বস্তুটি খসখসে না মসৃণ? শক্ত না নরম? এইসব জিনিসের প্রতি তাদের আগ্রহটা বেশি থাকে।

 জন্মের পর প্রথম তিন মাস পর্যন্ত শিশুরা চোখে ঝাপসা দেখে। অর্থাৎ আশেপাশের কোনো কিছুই তারা ভালো করে দেখতে পারে না। এই সময় তাদের সামনে রং বেরঙের জিনিস রাখা উচিত।

 চার মাস বছর বয়সী বাচ্চারা ঝুনঝুনি জাতীয় শব্দে সেদিকে ঘুরে তাকায়। হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। মুঠি করে ধরতে শুরু করে। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে বাচ্চাদের আশেপাশের খেলনা বা পুতুলগুলো যেন নরম হয়। কোথাও ধারালো কিছু না থাকে। খেলনার শব্দ যে হালকা বা মৃদু হয়। জোরালো শব্দ শিশুর শ্রবণশক্তির ব‍্যাঘাত ঘটাতে পারে।

 ছয় থেকে সাত মাস পার হয়ে গেলে খেলনা এক হাত থেকে অন্য হাতে নিতে পারে। তাই এই বয়সী বাচ্চাদের ওজনে হালকা জাতীয় খেলনা দিতে হবে। দেশীয় উপকরণের তৈরী খেলনাই শিশুদের জন্য উত্তম।

 নবজাতকদের জন্য এমন খেলনা বেছে নেয়া উচিত যেগুলো রঙিন ও ঝুলে থাকে। এগুলো বাচ্চার কল্পনাশক্তি প্রখর করতে সাহায্য করে।

 শিশুর দোলনার উপর ঝুলন্ত খেলনা শিশুর মাথার উপর ক্রমাগত দুলতে থাকে ফলে শিশুর দৃষ্টিশক্তি ও মনোযোগী মনোভাব বৃদ্ধি পায়।

 

▪এক বছরের শিশুর খেলনা কেমন হবে?

 এসময় বাচ্চাদের সবকিছু মুখে দেবার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তাই এই বয়সী বাচ্চাদের খেলনা হতে হয় পরিষ্কার। এজন্য এমন খেলনা নির্বাচন করতে হবে যা সহজেই পরিষ্কার করা যায়।

 •এই সময় তারা চারপাশের সবকিছুর নাম জানতে শিখে। তাই তাদেরকে এই বয়সে বিভিন্ন পশু পাখি ফল ফুল এর ছবি অথবা এই ধরনের খেলনা দিতে হবে।

 রঙিন কাগজ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলনা বানিয়ে সেসব জিনিসের উপর বিভিন্ন গল্প বললে তাদের মনোযোগ বাড়ে ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

 এই বয়সী শিশুরা আয়নায় নিজেদের প্রতিচ্ছবি, অবয়ব দেখে যানপরানই অবাক হয়। আয়নায় দেখে তারা বুঝতে পারে হাসলে কেমন দেখায়, কাঁদলে কেমন দেখায় তাকে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে হাসি কান্নার মুখায়ব বুঝতে শিখে।

 

দুই বছর বয়সীদের জন্য উপযুক্ত -

 এই বয়স সীমাটি শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ বয়সে শিশুর কার্যকারণ সম্পর্কে ধারণা জন্মাতে থাকে। এই সময় শিশুদের ব্লক দিয়ে খেলতে দিলে তারা নিজের থেকে অনেক কিছু তৈরী করতে শিখে ফলে এদের গঠনমূলক জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।

 এই সময় তাদের এমন খেলনা দিতে হবে যাতে ইনপুট দিলে খেলনা থেকে একটি আউটপুট বা রেসপন্স পাওয়া যায়। যেমন- রোবটের বোতাম টিপলে সে হাঁটতে শুরু করে। অথবা খেলনা পাখির বোতাম টিপলে পাখিটি কথা বলতে শুরু করে। শিশুরা প্রচন্ড অনুকরণপ্রিয় হয়। এমনকি খেলনার রেসপন্স দেখে সে নিজেও রেসপন্স করে।

 রিং স্ট‍্যাকিং হচ্ছে এমন একটি খেলনা যেখানে একটি স্ট‍্যান্ডে বিভিন্ন রং ও আকারের রিং ঢোকানো থাকে। এটির মাধ্যমে শিশু আকার আকৃতি সম্পর্কে শিখতে পারে। রিং গুলোর মাধ্যমে বাচ্চাদের বিভিন্ন রং ও গণনা করাও শিখানো যায়।

 পুল-পুশ জাতীয় খেলনা গাড়িগুলোর মাধ্যমে শিশুদের পেশি সঞ্চালন ও ভারসাম্য রক্ষার কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যত বেশি এজাতীয় খেলনা দিয়ে খেলে ততো বেশি পেশি সঞ্চালন হয় ফলে দ্রুত হাঁটতে শিখে। হাঁটার সময় খুব সহজেই নিজের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।

 দুই বছরের পর থেকেই শিশুরা বলকে লাথি মারতে শিখে। চার বা তারও অধিক ব্লক দিয়ে লেগোর বিল্ডিং বানাতে শিখে।

 এই বয়সী শিশুরা পেন্সিল ধরতে শিখে এবং খাতায় বা বিভিন্ন কাগজে রং এর ব‍্যবহার করে হিজিবিজি ছবি আঁকে। ফলে এরা রঙের ভিন্নতা সম্পর্কে বুঝতে শিখে।

 

▪ তিন বছরের শিশুদের জন্য কোনটি ভালো হবে-

তিন বছর বয়স থেকে শিশুরা ছোটখাটো পাজল মিলাতে শিখে। তিন চাকার ছোট সাইকেলে প‍্যাডেল মারতে শিখে। এই বয়সের শিশুরা হয় অতি চঞ্চল স্বভাবের। তারা সারাদিন ছোটাছুটি দৌড়াদৌড়ি করতে ভালোবাসে।

 এই বয়সী শিশুরা রোল প্লে করতে খুব পছন্দ করে। অর্থাৎ পুতুলকে নিজের সন্তানের মতো করে আদর করতে, খাওয়ানোর ঘুম পাড়ানোর অভিনয় করতে ভালোবাসে। তাই তখন তাদের রান্না করার জিনিসপত্র, ডাক্তারি সেট এই ধরনের খেলনা কিনে দেয়া উচিত। এইসব খেলার মাধ্যমে শিশুটির মধ্যে সামাজিকতা, সৌজন্যবোধ, মানুষের সাথে মিশতে চাওয়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।

 বিজি বক্স বা পপআপ খেলনা যাতে মেকানিক‍্যিল বিভিন্ন যন্ত্রাংশ থাকে তা শিশুর পেশি সঞ্চালন সংক্রান্ত দক্ষতা, সমস্যা সমাধান, কারণ ও এর প্রভাব সম্পর্কিত জ্ঞান লাভ করে।

 প্রথম এক বছর পর্যন্ত শিশুরা নিজেদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় ব‍্যবহার করে বিভিন্ন খেলনা বস্তুর অন্বেষণ করে। এর পর সময়ের সাথে ধীরে ধীরে এগুলোর সঠিক ব‍্যবহার করতে শিখে। খেলনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে বয়স অনুযায়ী খেলনা নির্বাচন করা। খেলনা হতে হবে এমন কিছু যেন শিশু তার বয়স অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে খেলনাটি দিয়ে সে কী এবং কীভাবে খেলবে। বয়স হলে শিশুকে ভিতরে ও বাইরে দুই স্থানেই খেলার জন্য আগ্রহী করে তুলতে হবে। ভালো খেলনার বৈশিষ্ট্য হলো সেটি হবে আবিষ্কারধর্মী, সৃজনশীল ও নাটকীয়। খেলনা হতে হবে এমন যার সাহায্যে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে। বয়সের সাথে সাথে খেলনার ধরনেরও পরিবর্তন হবে। খেলতে খেলতেই যেন শিশুর বিকাশ ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।