" নবজাতকদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও এর সমাধান "

" নবজাতকদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও এর সমাধান "

970,600+ Cute Baby Stock Photos, Pictures & Royalty-Free Images - iStock |  Baby smile, Newborn, Baby

একটি শিশু জন্ম নেয়ার সাথে সাথে একটি নতুন পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার উপযোগী করে তোলার জন্য বেশ কিছু বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। জন্মের থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত সময়কালে শিশুকে নবজাতক বলা হয়।

 

☆ পরিণত শিশু:

একটি নবজাতককে তখনই সুস্থ বা স্বাস্থ্যবান শিশু বলা যায়, যখন সে

গর্ভের ৩৭-৪২ সপ্তাহ পূর্ণ করে জন্মায়।জন্মের পরপরই কাঁদে।কোনো সাহায্য ছাড়াই নিঃশ্বাস নেয়।ওজন ২.৫ কিঃ গ্রাঃ বা তার উপরে হয়।তাড়াতাড়ি পারিপার্শ্বিকতার সাথে মানিয়ে নিতে পারে।

 

☆ অপরিণত শিশু:

 

যখন কোনো শিশু গর্ভের ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই জন্মগ্রহণ করে তখন তাকে অপরিণত শিশু বলে।

 

◆ অপরিণত শিশুর বৈশিষ্ট্যঃ

 

▪ওজন ২৫০০ গ্রামের কমমাথা ও পেট আকারে বড় দেখায়।

▪ মাথার হাড়গুলো নরম হয় এবং দুই হাড়ের মাঝখানে বেশি ফাঁক থাকে।

▪ বুকের চেয়ে মাথা বড় দেখায়।

▪ চোখ বন্ধ থাকে। ▪▪চামড়া পাতলা ও মুখের লালা চকচকে হয়। ▪মাংসের শক্তি কম থাকে।

▪আস্তে আস্তে কাঁদেশ্বাস- প্রশ্বাস দ্রুত এবং অনিয়মিত হয়।

▪মায়ের স্তন চুষতে কষ্ট হয়।

▪কম প্রস্রাব হয় এবং কম আহার হয়।

 

☆ নবজাতককে নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে হলে-

 

জন্মের সাথে সাথে শিশুকে শুকনো নরম কাপড় দিয়ে আলতো চাপ দিয়ে মুছতে হবে।আরেকটি পরিষ্কার শুকনো কাপড়ে মাথা ও শরীর জড়িয়ে রাখতে হবে।দেরি না করে নবজাতককে মায়ের বুকে দিতে হবে। মায়ের শরীরের উষ্ণতা নবজাতকের জন্য প্রয়োজন।জন্মের ৩ দিনের মধ্যে কোনোভাবেই শিশুকে গোসল করানো যাবে না ।

 

☆ জন্মের ২৮ দিন পর্যন্ত নবজাতকের বিপদচিহ্ন সমূহ-

 

▪দ্রুত শ্বাস নেয়া অথবা বুকের খাঁচা দেবে যাওয়া।

▪বুকের দুধ টানতে না পারা অথবা নেতিয়ে পড়া।

▪জ্বর বা শরীর ঠান্ডা হওয়া।

▪খিঁচুনি হওয়া।

▪নাভি পাকা।

 

☆ এক্ষেত্রে যা যা করণীয়-

 

মা ও পরিবারের সদস্যদের বিপদচিহ্ন চিনতে হবে।বিপদ লক্ষণ দেখা দিলেই শিশুকে তাৎক্ষণিক নিকটতম সেবাকেন্দ্রে বা সেবাদানকারীর নিকট নিয়ে যেতে হবে।

 

☆ শ্বাসকষ্ট-

 

জন্মের সময় স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছে এমন শিশুরও পরে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে। সংক্রমণ, হৃৎপিণ্ড অথবা ফুসফুসের রোগ, শরীরের উচ্চ অথবা নিম্ন তাপমাত্রা অথবা অন্যান্য অসুস্থতার জন্যও শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।

 

◆শ্বাসকষ্টের লক্ষণঃ

 

▪দ্রুত শ্বাস (প্রতি মিনিটে ৬০ বা তার বেশি)বুকের নিচের অংশ মারাত্মকভাবে দেবে যাওয়া।

 

☆বুকের দুধ টানতে না পারা-

 

মা যদি বলেন শিশু জন্মের পর ঠিকমত খেতো কিন্তু বর্তমানে আগের মত খাচ্ছে না বা বুকের দুধ টানতে পারছে না ও নেতিয়ে পড়ছে, তাহলে বুঝতে হবে শিশুর মারাত্মক রোগ আছে। এ অবস্থায় শিশুর মায়ের দুধ খাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে হবে ও শিশুকে সেবাদান কেন্দ্রে রেফার করতে হবে।

 

 

☆জ্বর বা শরীর ঠান্ডা হওয়া:

 

◆ জ্বর (৩৭.৫ ডিগ্রি সেঃ বা ৯৯.৫ ডিগ্রি ফাঃ এর বেশি তাপমাত্রা) -

 

নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা ৩৭.৫ ডিগ্রি সেঃ বা ৯৯.৫ ডিগ্রি ফাঃ এর উপরে উঠে গেলে জ্বর বা উচ্চ তাপমাত্রা বলা হয়। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে পানি ঘাটতি অথবা শরীরের পানি কমে যায়, খিঁচুনি হতে পারে, শরীর অসাড় হয়ে যেতে পারে, সংজ্ঞাহীন এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। অতি সত্বর নবজাতককে রেফার করতে হবে।

 

◆ নিম্ন তাপমাত্রা (৩৫ ডিগ্রি সেঃ বা ৯৫.৫ ডিগ্রি ফাঃ এর কম তাপমাত্রা) -

 

শরীরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেঃ বা ৯৫.৫ ডিগ্রি ফাঃ এর নিচে নেমে গেলে সেই তাপমাত্রা হল নিম্ন তাপমাত্রা (হাইপোথার্মিয়া)।তাপমাত্রা রক্ষার ব্যবস্থা না নিলে জন্মের পরপরই নবজাতকের নিম্ন তাপমাত্রা হতে (হাইপোথার্মিয়া)পারে । ঘরের তাপমাত্রা কম, নবজাতকের শরীর ভেজা, নবজাতককে কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে না রাখলে, অপরিণত ও কম-জন্ম-ওজনের নবজাতকের ক্ষেত্রে নিম্ন তাপমাত্রা হতে পারে। প্রসবের ঘরের তাপমাত্রা যাতে ঠান্ডা না থাকে, সেজন্য জন্মের পরপর শিশুকে শুষ্ক ও উষ্ণ রেখে, মায়ের বুকের সাথে লাগিয়ে (Skin to skin contact) বা ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (KMC) পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং রেফার করার প্রয়োজন হলে যাবার পথে মাঝখানে কাপড় না রেখে মা অথবা অন্যকারো বুকের সাথে শিশুকে লাগিয়ে রেখে নিম্ন তাপমাত্রা রোধ করতে হবে।

 

শিশুর নিম্ন তাপমাত্রা যদি দ্রুত সনাক্ত করা না যায় এবং চিকিৎসা করা না হয়, তবে শিশুর অবস্থার অবনতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

When Do Babies Start Smiling?

পর্ব- দুই

 

☆হাইপোথার্মিয়া প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা -

 নবজাতকে জন্মের পরপরই মুছে শুষ্ক করা ।জন্মের পরপর অন্তত ২ ঘণ্টা ত্বকে ত্বক লাগিয়ে রাখা। নবজাতকের মাথা ও শরীর শুষ্ক কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে উষ্ণ রাখা। জন্মের পর ৩দিন শিশুকে গোসল না করানো।

 

☆ খিঁচুনি হওয়া-

 বিভিন্ন অসুস্থতায় অনেক সময় শিশুর হাত-পা শক্ত হয়ে যায়, তাকে খিঁচুনি বলে। খিঁচুনির সময় শিশু অজ্ঞান হয়ে যায় এবং সে সময় ডাকলে অথবা নাড়া দিলে সে কোনো সাড়া দেয় না। বিভিন্ন কারণে শিশুর খিঁচুনি হতে পারে। অতিরক্ত জ্বরের সময় প্রায়ই শিশুদের খিঁচুনি হয়। তাই জ্বরের সাথে খিঁচুনি হলে বা অন্য যে কোন কারণে খিঁচুনি হলেই তা বিপদজনক চিহ্ন মনে করে দ্রুত সেবাদান কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

 

☆নাভি পাকাঃ

 নাভির সংক্রমণের চিকিৎসায় বিলম্ব হলে অথবা সঠিক চিকিৎসা না হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং শিশুর মৃত্যুও ঘটতে পারে। নাভিতে কোনো কিছু লাগানোর প্রয়োজন নেই ।

 

◆ নাভির সংক্রমণের লক্ষণ-

 নাভি থেকে পুঁজ পড়া।নাভির চারদিকে চামড়া পর্যন্ত লাল হয়ে যাওয়া।নাভিতে দুর্গন্ধ হওয়া।

 

◆ নাভির যত্ন-

 লক্ষ্য রাখতে হবে যে নাভিতে কোনো সংক্রমণ আছে কি-না। যেমন- নাভির গোড়ার চারদিকে লাল হয়ে যাওয়া যা পেটের চামড়া পর্যন্ত বিস্তৃত, নাভি থেকে ঘন পুঁজ বের হওয়া, দেরিতে নাভি পড়া ইত্যাদি। সাধারণত ৫-৭ দিনের মধ্যে নাভি পড়ে যায়। নাভি শুকনো,পরিষ্কার ও খোলামেলা রাখতে হবে।নাভিতে কোনো কিছু লাগানো যাবে না। যদি সংক্রমণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত সেবাদান কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে ।

 

☆ জন্ডিস-

 অধিকাংশ নবজাতক বিশেষ করে অপরিণত শিশুদের যকৃত অপরিণত থাকে বলে পিত্তরসে যথেষ্ট বিলিরুবিন নিঃসরণ করতে পারে না। ফলে বিলিরুবিন রক্তে চলে আসে এবং শিশুর জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়। এই জন্ডিসকে শরীরবৃত্তীয় জন্ডিস বলে। জন্মের ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে বিশেষ করে মাথা ও মুখ হলুদ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে শিশুর সমস্ত শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে। সাধারণত ১-২ সপ্তাহের মধ্যে শরীরের রং স্বাভাবিক হয়ে আসে। জন্ডিস যেন মারাত্বক আকার ধারণ না করে সেজন্য শিশুকে -

 

▪শিশুকে প্রতিদিন খালি গায়ে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রোদে রাখতে হবে (এ সময় শিশুর চোখ ও মাথা ঢেকে দিতে হবে।

 

▪শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ দিতে হবে।

 

▪তবে যদি জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিশু যদি জন্ডিসে আক্রান্ত হয় এবং জন্ডিসের সাথে অন্যান্য লক্ষণ যেমন- দ্রব্লতা, নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, বুকের দুধ না খাওয়া ইত্যাদি থাকে তবে জরুরি ভিত্তিতে শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

 

☆ সমস্যা চিহ্নিতকরণ-

 

বেশিরভাগ শিশুই সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করে । জন্মের পর শিশুকে খুব দ্রুত সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। সেজন্য শিশু জন্মের প্রথম কয়েক ঘন্টার যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের লোকজন নবজাতকের বিপদজনক চিহ্নগুলো সম্পর্কে জানে না, তাই এসম্পর্কে তারা সময়মত সচেতন হয় না ও উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে না।

 

 

☆ সেবাদানকারীদের জন্য কিছু সম্ভাব্য সমস্যা ও সমস্যার সমাধান নিম্নে দেয়া হলোঃ

 

◆ সমস্যাগুলো-

 

▪নাড়ির কাটা অংশের চারদিকে এবং নাভির চারপাশে পেটের চামড়া লাল হয়ে যাওয়া।

▪নাড়ি কাটার পর কোন কিছু লাগানো বা ব্যবহার করা।

▪নবজাতকের বিপদচিহ্ন দেখা দিলে চিকিৎসা না করা বা চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে যাওয়া বা সেবাদানকেন্দ্রে না যাওয়া।

 

☆ উপরের সমস্যাগুলোর কয়েকটি সম্ভাব্য সমাধান:

 

যদি নাভিতে সংক্রমণ দেখা যায় তাহলে দ্রুত সেবাদানকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। নাভিতে কোনো কিছু লাগানো যাবে না। নাভি শুকনো, পরিষ্কার ও খোলা রাখতে হবে। নবজাতকের বিপদচিহ্ন (শ্বাসকষ্ট, বুকের দুধ টানতে না পারা, জ্বর বা শরীর ঠান্ডা হওয়া, খিঁচুনি হওয়া, নাভিপাকা ইত্যাদি )দেখা দিলে যতো দ্রুত সম্ভব সেবাদানকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।