বড়বেলায় ঘুমানোর সঙ্গী যখন পুতুলঃ ভালো, না খারাপ অভ্যাস?

বড়বেলায় ঘুমানোর সঙ্গী যখন পুতুলঃ ভালো, না খারাপ অভ্যাস?

 তিন্নির কী যে এক বাজে অভ্যাস! ছোটবেলার খেলনা ভাল্লুক গোলুকে ছাড়া ঘুমাতেই পারে না! কিন্তু এতো বড় হয়ে যাওয়ার পরেও খেলনা নিয়ে ঘুমানোর এই অভ্যাসটা কি ভালো? তিনি কি কখনো বড় হবে না?

মজার ব্যাপার হলো, শুধু তিনি নয়। নরম খেলনাকে পাশে নিয়ে অনেক প্রাপ্তবয়স্কই ঘুমাতে পছন্দ করেন। এই খেলনার মধ্যে সবচাইতে বেশি এগিয়ে থাকে বিশালাকায় ভাল্লুক। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এক বা একাধিক খেলনাকে আশেপাশে নিয়ে ঘুমাতে পছন্দ করেন তারা। নানারকম কারণ দেখানো হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছোটবেলার অভ্যাসকে ছাড়তে পারেন না এই ব্যক্তিরা। চারপাশে পুতুল থাকার ফলে এক রকমের নির্ভরশীলতা গড়ে ওঠে। পুতুলদের চারপাশে রাখলে নিজেকে নিরাপদ মনে করেন অনেকেই। তবে এই ব্যাপারটি নিয়ে লজ্জায় পড়ার আর কোন কারণ নেই!

কেন? কারণ, গবেষকদের মতে নরম পুতুল নিয়ে ঘুমানো আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী! চলুন, দেখে নেওয়া যাক এই অভ্যাসটির ইতিবাচক দিকগুলো।

 সম্প্রতি স্টাফড খেলনার সাথে ঘুমানো ভালো নাকি খারাপ অভ্যাস তা জানার জন্য একটি গবেষণা করা হয়। ইউভই ইউনিভার্সিটি অফ আমস্টারডামের একদল গবেষক এই গবেষণার উত্তর হিসেবে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক খুঁজে পান। নরম এই পুতুলের স্পর্শ একজন মানুষের শরীরকেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে বলে জানা তারা।

প্রথমত, পুতুলের সংস্পর্শে ঘুমের সময়ে থাক একজন মানুষের মানসিক চাপকে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। মনে পড়ে, যখন স্কুলের বন্ধুর সাথে ঝগড়া করে নিজের পুতুলকে জড়িয়ে কেঁদেছিলেন? অনেকেই ছোটবেলা থেকে পুতুলের সাথে বড় হয়েছেন কারণ এটাই নিয়ম। ছোটরা তো পুতুল দিয়ে খেলবেই। তবে বাস্তবে এই পুতুল একজন মানুষের ছোটবেলা থেকে বড়বেলা পর্যন্ত মানসিক চাপ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।

দ্বিতীয়ত, অনেকের ক্ষেত্রেই সারাদিন চারপাশে অনেক মানুষ থাকলেও ঘুমোতে যাওয়ার সময় নির্ভর করা যায় এমন একটা ছোঁয়ার দরকার পড়ে। মানসিক নির্ভরতার এই জায়গা থেকেও অনেকেই বড় হয়ে যাওয়ার পরঅ খেলনাকে পাশে রাখতে পছন্দ করেন। নিরাপদ বোধ করেন পরিচিত কোন কিছুর সংস্পর্শে।

তৃতীয়ত, খেলনা শুধু যে স্পর্শের মাধ্যমেই মানসিক প্রশান্তি দেয় আমাদের তা কিন্তু নয়। হাসিমুখের একটা খেলনা, তাদের ছোট ছোট আদরমাখা চোখ চারপাশে দেখলেও মনটা ভালো হয়ে যায়। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। চারপাশের সব ঝামেলা যেন একটু সময়ের জন্য হলেও দূরে চলে যায়।

চতুর্থত, খেলনা একজন মানুষকে ঘুমানোর ব্যাপারে সাহায্য করে। সম্প্রতি বেস্ট ম্যাট্রেস ব্র্যান্ড দ্বারা পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় মোট ২,০০০ জন আমেরিকার বাসিন্দাকে জিজ্ঞেস করা হয় খেলনা সম্পর্কে এবং তাদের মধ্যে ৩৭.৫ জনই স্টাফড খেলনার সাথে ছোটবেলায় ঘুমাতেন বলে জানা যায়। এদের মধ্যে শতকরা ৭% অংশগ্রহণকারী এখনো অব্দি খেলনাকে সাথে নিয়েই ঘুমান। বয়স্ক এই মানুষগুলো এবং অন্যদের কাছ থেকেও যেটা জানতে পারা যায় যে, খেলনার সংস্পর্শ একজন মানুষকে দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করে। স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ তাড়াতাড়ি একজন মানুষ খেলনার সাথে ঘুমিয়ে পড়েন।

এছাড়াও, মানুষ সামাজিক জীব। মানুষের মধ্যে অনেকেই যেমন একা থাকতে পছন্দ করেন, তেমনি কিছু মানুষ একা থাকার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। নিজেদের একাকীত্ব দূর করতেও অনেকেই পুতুলকে নিজের বন্ধু বা সন্তানের মতো মনে করেন এবং ঘুমানোর সময় পাশে রাখতে চান।

তাহলে সবসময়ই কি খেলনার সংস্পর্শ একজন মানুষের জন্য ভালো? হ্যাঁ, মানসিক অ শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খেলনা চারপাশে রাখা বা খেলনাকে জড়িয়ে ঘুমানোর মতো ব্যাপারগুলো আপনি করতেই পারেন। এতে লজ্জার কিছু নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা ততক্ষণ পর্যন্তই ভালো যতক্ষণ একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও সম্পর্কে কোনরকম সমস্যা সৃষ্টি না করে।