বাক্সভর্তী নান রঙঃ কীভাবে জন্ম হলো ক্রেয়নের?

বাক্সভর্তী নান রঙঃ কীভাবে জন্ম হলো ক্রেয়নের?

রোদ হাত-পা নাড়াতে শুরু করার পর থেকেই রঙয়ের প্রতি তার আগ্রহ অসীম। বসতে শেখার পর থেকে মেঝে ও দরকারি বই-খাতা, আর নিজের পায়ে দাড়ানোর পর থেকেই ঘরের সব দেয়াল রঙ দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছিলো সে। আর আরেকটু বড় হওয়ার পর থেকেই সারাক্ষণ খাতায় এটা-সেটা আঁকা। তবে সব রঙয়ের ভেতরে ক্রেয়নটাই সবচাইতে বেশি ব্যবহার করে রোদ। শুধু রোদ নয়, রঙ হিসেবে ক্রেয়নকে পছন্দ আরো অনেক শিশুর। কিন্তু এই ক্রেয়ন এলো কীভাবে তা কি জানা আছে?

১৯০৩ সালে এডউইন বিনি এবং সি হ্যারল্ড স্মিথ ভাইয়ের হাত ধরে প্রথম শুরু হয় ক্রেয়নের পথচলা। সেসময় ক্রেয়ন ছিল মাত্র আটটি রঙ নিয়ে। এক নিকেল দিয়ে বিক্রি করা সেই ক্রেয়নের বক্সে রঙগুলো ছিল কালো, বাদামী, নীল, লাল, বেগুনী, কমলা, হলুদ এবং সবুজ। তখন এই ক্রেয়ন তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ক্রায়োলা। ক্রায়োলা শব্দটি তৈরি করেছিলেন এডউইন বিনির স্ত্রী এলিস স্টিড বিনি। ফ্রেঞ্চ শব্দ চক (ক্রেয়ই) এবং অয়েলি (অলেজিনোউস) এর মিশ্রণে এই শব্দটি তৈরি করেন তিনি।

সেসব অবশ্য অনেক আগের কথা। বর্তমানে প্রায় একশটির বেশি ভিন্ন ভিন্ন রঙয়ের ক্রেয়ন তৈরি করে ক্রায়োলা। গ্লিটার ব্যবহার করা ক্রেয়ন, অন্ধকারে উজ্জ্বল দেখায় এমন ক্রেয়ন, ফুলের গন্ধমাখা ক্রেয়ন, দেয়াল থেকে সহজে মোছা যায় এমন ক্রেয়ন- নানাবিধ, নানারকমের ক্রেয়ন তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

ক্রেয়নের ইতিহাস

১৮৬৪ সালের কথা। নিউ ইয়র্কের পিকস্কিলে জোসেফ ডব্লিউ বিনি পিকস্কিল কেমিক্যাল কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এই কোম্পানির মূল কাজই ছিল কালো ও লাল রঙয়ের ভিন্ন ভিন্ন ধরণ তৈরি করা। ল্যাম্পব্যাক, চারকোল লাল আয়রন অক্সাইডযুক্ত রঙ- এমন নানারকম জিনিসপাতি বানাতেন বিনি তখন এই কোম্পানিতে। বর্তমানে অটোমোবাইল গাড়ির চাকার যে কালো টায়ার, সেটাকেও কার্বন ব্ল্যাক মিশিয়ে টেকসই করে তোলেন বিনি।

১৮৮৫ সালে কোম্পানির কাজ একটু সামনে এগিয়ে যায়। সেবার জোসেপের ছেলে এডউইন বিনি এবং ভাগ্নে সি হ্যারল্ড স্মিথ একসাথে বিনি এন্ড স্মিথ প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন, যেটার কাজ ছিল জুতার পোলিশ আর ছাপানোর কালি তৈরি করা। ১৯০০ সালে একটি বিদ্যালয়ের জন্য স্লেট পেন্সিল বানানোর কাজ পান এই ভাইয়েরা। তখনই বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য রঙিন পেন্সিল তৈরি করার চেষ্টা করেন তারা। এমন এক রঙিন পেন্সিল, যেটি টেকসই হবে, শরীরের জন্য ক্ষতিকর হবে না। ততদিনে মোমের ক্রেয়ন তৈরি করে ফেলেছিলেন তারা। তবে বেশ বিষাক্ত ছিল সেটা। শিশুদের জন্য এমন কিছু বানানোর পক্ষপাতী ছিলেন না বিনি বা স্মিথ। তবে তাই বলে কাজ থেকে হাতপ গুটিয়ে নেননি তারা। বারবার চেষ্টা করার পর অবশেষে ১৯০৩ সালে ভালো মানের ক্রেয়োলা ক্রেয়ন তৈরি করে বিনি এন্ড স্মিথ।

বর্তমান সময়ের যে ক্রেয়ন সেটার শুরু হয় ইউরোপে। লাঠির মতো দেখতে মানবসৃষ্ট রঙ, যার প্রাথমিক উপাদানই ছিল চারকোল ও তেল। তবে পরবর্তীতে চারকোলের বদলে ক্রেয়নের নানারকম পাউডারসদৃশ পিগমেন্ট ব্যবহার করা হয়। এরপর আবার আসে পরিবর্তন। তেলের বদলে ক্রেয়নে মোম ব্যবহার করা হয়। এতে করে ক্রেয়ন যেমন আরো বেশি শক্ত হয়, তেমনি একে ব্যবহার করাও সহজ হয়ে পড়ে।

নাহ, হাতের যে ছোট্ট ক্রেয়ন রঙটা দিয়ে আঁকিবুঁকি করছেন, সেটার পথটা খুব একটা সহজ ছিল না। সময়ও লেগেছে প্রচুর। কিন্তু শেষমেশ বিনি এন্ড স্মিথ ভাইদ্বয়ের চেষ্টা আমাদের হাতে এসেছে নানান রঙয়ের ক্রেয়ন। শুধু রঙ নয়, নানারকম নতুন নতুন উপকারী দিকও নিজেদের ক্রেয়নে যোগ করেছেন এই দুই ভাই। আপনার শিশু কি ক্রেয়ন দিয়ে কাগজ ভরা ছবি আঁকছে? ওকে আঁকতে দিন! ওর জন্যই তো বিনি আর স্মিথ ভাইয়েরা একদিন নাওয়া-খাওয়া ভুলে ক্রেয়ন তৈরির এতো চেষ্টা করেছিলেন!