"বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি না হওয়া – কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার"

"বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি না হওয়া – কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার"

আমরা সকলেই জানি যে- 'আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।' এই ভবিষ্যতের সঠিক বৃদ্ধি সাধনের এদের স্বাস্থ্যের সঠিক ও সুস্থ বৃদ্ধি সাধন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সমস্ত পিতামাতাই তাদের সন্তানের বিকাশের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হন, একটি শিশুর সুস্থ বিকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে অনেক কিছুই করতে হয়, স্থির এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি এই বিকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। ওজন হ্রাস করার মতো, ওজন বাড়ানোও একটি কঠিন এবং ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া হতে পারে।

 

☆ শিশুদের মধ্যে প্রত্যাশিত ওজন বৃদ্ধি বলতে কী বোঝায়?

 শৈশবকালে অপুষ্টি হল সবচেয়ে মারাত্মক এবং যে কোনও শিশু এর মুখোমুখি হতে পারে এমন একটি পরিস্থিতি। যেটি এড়ানো উচিত, আপনার শিশু অপুষ্টিত কিনা তা জানা হল এই সমস্যাটি সমাধানের দিকে প্রথম পদক্ষেপ। শিশুর বৃদ্ধির সম্বন্ধে ডাব্লু.এইচ.ও. স্টাডিকে একটি মানদণ্ড হিসাবে ব্যবহার করা হল। শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং অস্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি কী তা বোঝার সেরা উপায়।

 

◆ অস্ট্রেলিয়ান ব্রেস্টফিডিং অ্যাসোশিয়েশন অনুযায়ী, যারা বাচ্চার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ডাব্লু.এইচ.ও. এর মতো একই মানদন্ড ব্যবহার করে, বাচ্চাদের ওজন হ্রাস এবং ওজন বৃদ্ধির স্বাভাবিক মানগুলি হল:

 ▪ প্রসবের পরে প্রথম সপ্তাহের মধ্যে একটি নবজাতক তাদের জন্মের ওজনের প্রায় ৫% থেকে ১০% হারায়।

▪ প্রসবের প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি নবজাতক কমে যাওয়া ওজন ফিরে পেতে শুরু করে।

▪বাচ্চাদের স্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি হলে জন্মের প্রথম তিন থেকে চার মাসের মধ্যে তাদের ওজন জন্মের ওজনের দ্বিগুণ হওয়া উচিত।

▪ ছেলেরা প্রথম বছরের মধ্যে তাদের জন্মের ওজনের প্রায় তিনগুণ বাড়িয়ে নিতে পারে।

▪ মেয়েরা তাদের জন্মের ওজন তিনগুণ করতে ষোল মাস পর্যন্ত সময় নিতে পারে।

▪ প্রথম বছরের মধ্যেই আপনার শিশুর জন্মের দৈর্ঘ্য দেড়গুণ বাড়বে বলে আশা করা হয়।

▪ আপনার বাচ্চার মাথার পরিধি তাদের প্রথম জন্মদিনের আগে বা তার কাছাকাছি প্রায় ১১ ইঞ্চি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হয়।

 (বিঃদ্রঃ: এগুলি জাতিসংঘের একটি গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি নির্দেশিকা, আপনার শিশু যদি এই মানদন্ডগুলি পূরণ না করে, তবে আপনার শিশুর স্বাভাবিকভাবে বিকাশ হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে আরও ভাল বোঝার জন্য দয়া করে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।) 

☆ আপনার শিশুর ওজন না বাড়লে আপনার কি উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন আছে?

 আপনার শিশুটি অনন্য একথা স্মরণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কোনও দু’টি শিশুই এক রকম হয় না। অনেক সময় বাচ্চার বৃদ্ধি ধীর গতিতে হতে পারে। আপনার বাচ্চার ওজনের উপর অবশ্যই লক্ষ্য রাখুন। কারণ, অত্যন্ত ধীর গতিতে ওজন বৃদ্ধি হওয়া একটি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো লক্ষণ হতে পারে। আপনার পেডিয়াট্রিক বা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন, একটি স্বাস্থ্যকর পুষ্টিকর ডায়েট অনুসরণ করুন। আতঙ্কিত হবেন না এবং আপনার মনের শান্তির জন্য শিশুকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়াবেন না। জন্ম থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস করালে জীবনে দীর্ঘ পথে আপনার শিশুটির সর্বদা স্বাস্থ্যকর খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে।

 প্রতিটি শিশুর একটি সম্পূর্ণ অনন্য বৃদ্ধির রেখা থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার চিকিৎসকরা নিরুদ্বেগে থাকেন এবং আপনার শিশু স্বাস্থ্যকরভাবে খায়, আপনি শান্তিতে থাকতে পারেন। কারণ ওজন বৃদ্ধি তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির হারের ভিত্তিতে ঘটবে। শিশুদের ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিক হতে পারে তবে এটি পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

 

☆ আপনার শিশুর ওজন কীভাবে পরিমাপ করা হয়?

 সাধারণত বিকাশের মাইলফলক হিসাবে যা পরিচিত তা ব্যবহার করে, চিকিৎসকরা আপনার সন্তানের ওজন পরিমাপ শুরু করতে পারেন এবং স্বাস্থ্যকর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ওজন বৃদ্ধি বা ওজন হ্রাস মূল্যায়ন করতে পারেন। এই মাইলফলকগুলি এক শিশু থেকে অন্য শিশুর ক্ষেত্রে আলাদা হতে পারে।

পর্ব- দুই

 এগুলিতে কেবল ওজন এবং উচ্চতাই নয়, অন্যান্য কারণগুলিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যেমন কখন আপনার শিশুটি প্রথম হাসে এবং কখন তারা কোনও শব্দের দিকে মাথা ঘোরাতে শুরু করে, চিত হয়ে শুয়ে থাকার সময় তারা উল্টে উপুড় হয়ে যেতে পারে কিনা, কখন তারা তাদের মুখের উপর হাত তোলে, এবং তারা অবলম্বন ছাড়াই তাদের ঘাড়ের ওজন বহন করতে পারে কিনা।

প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে আপনার চিকিৎসক আপনার শিশুটিকে সম্পূর্ণ শারীরিকভাবে পরীক্ষা করার পর মাইলফলকগুলি স্থির করা হয়, তাঁরা আপনাকে কিছু বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্য যেমন- শিশুটি কাঁদে কিনা বা কোনও শব্দ করে কিনা সেদিকে নজর রাখতে বলবেন। পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে ডাক্তাররা আপনাকে শিশুর বিকাশের বিষয়ে কিছু রুটিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন যাতে বোঝা যায় যে, কোনো সমস্যা আছে কিনা। যদি তাঁরা কোনও সমস্যা শনাক্ত করেন তবে তাঁরা অন্তর্নিহিত কারণটি অনুসন্ধান করার জন্য প্রশ্ন এবং চিকিৎসাগত পরীক্ষার মাধ্যমে তদন্ত করবেন।

 ওজন বাড়ার অসুবিধাগুলি একটি সাধারণ সমস্যা হতে পারে অকালে প্রসবিত হয়েছে এমন শিশুদের ক্ষেত্রে। যদিও, পূর্ণমেয়াদে জন্ম নেওয়া শিশুর ক্ষেত্রে শৈশবকালে ওজন ওঠা নামার ঝুঁকি কম থাকে, তবুও এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

 ☆ কোনও শিশুর ওজন না বাড়ার কারণগুলি:

 আপনার শিশু স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা তা শনাক্ত করার জন্য ইতিমধ্যে উল্লিখিত কৌশলগুলি ব্যবহার করে, চিকিৎসক আপনার শিশুটি স্বাস্থ্যকর কিনা তা নির্ধারণ করবেন। তারা নির্ণয়ের জন্য যে মানদণ্ড ব্যবহার করবেন তা হল:

 ▪ চিকিৎসকরা তাদের যে বৃদ্ধির চার্ট নির্ধারিত করেছেন তার উপরে ওজনের তৃতীয় পার্সেন্টাইলে বা শতাংশে নেমে যাওয়া।

 ▪ অত্যন্ত নিম্ন বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) এ পড়ে যাওয়া যার অর্থ তাদের উচ্চতার উপর ভিত্তি করে যে ওজন হওয়া উচিত তার ২০% এর নিচে তারা আছে।

 ▪ বাচ্চা তার শেষ চেক আপের পরে, তার বরাদ্দ বৃদ্ধি চার্টের দুই শতাংশ লাইনেরও বেশি নিচে চলে যায়।

 এই পরিস্থিতিতে এই মানদণ্ডগুলি ওজন বৃদ্ধিতে কোনও সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে, চিকিৎসক ওজন হ্রাসের বৃদ্ধির কারণ নির্ধারণের চেষ্টা করবেন। বাচ্চাদের ওজন কমার কয়েকটি কারণ হল-

 

◆ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা:

 আপনার বাচ্চার ওজন বাড়ার অভাবের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খাচ্ছে না বা কোনও ফিডের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাচ্ছে না। শিশুর জিহ্বা বাঁধা থাকা বা মায়ের পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন করতে সমস্যা হওয়ার মতো অসংখ্য সমস্যার কারণে এটি হতে পারে। ল্যাকটেশন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বললে আপনার শিশুর প্রতিটি খাওয়ানোর সেশনের গুণমান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, তবে এটি করার আগে আপনার চিকিৎসক বা ল্যাকটেশন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন যাতে বুকের দুধের কম সরবরাহ বা আপনার সন্তানের যে চিকিৎসাগত সমস্যা রয়েছে যার জন্য তাকে খাওয়া নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে তা শনাক্ত করতে পারেন।

 

◆ আগে থেকে থাকা চিকিৎসা অবস্থা:

 আপনার বাচ্চার ওজন না বাড়ার কারণটি পূর্ব বিদ্যমান কোনও অবস্থার কারণেও হতে পারে, যেমন উপরের পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে, আপনার শিশুর জিহ্বা বাঁধা থাকা এই কারণগুলির মধ্যে একটি হতে পারে।

আরেকটি অবস্থা হতে পারে যদি মায়ের স্তনবৃন্ত উল্টানো থাকে। এমন অনেক চিকিৎসাগত অবস্থা রয়েছে যা মা ও শিশু উভয়কেই প্রভাবিত করতে পারে যার থেকে খাওয়ানোর সেশনগুলি দুর্বল হতে পারে। পরামর্শ দেওয়া হয় যে আপনি ডাক্তারের সাথে কথা বলুন এবং আপনার বা আপনার সন্তানের চিকিৎসার অবস্থাটি আরও ভালভাবে চিহ্নিত করার জন্য তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যান। চিহ্নিত হয়ে গেলে, খাওয়ানোর চক্রকে উন্নত করতে ডাক্তার একটি চিকিৎসার পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা করে।

পর্ব- তিন

 ☆ বাচ্চার ওজন না বাড়ার লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ:

 আপনার শিশুর পর্যাপ্ত ওজন বাড়ছে কিনা তা জানার একমাত্র উপায় নিয়মিত ওজন নেওয়া এবং চেক আপ করা। এটিও সুপারিশ করা হয় যে আপনি তাদের মল, প্রস্রাব এবং খাওয়ানোর অভ্যাসগুলি পর্যবেক্ষণ করুন এবং সেগুলি সম্পর্কে একটি নোট তৈরি করুন। যদি কোনও অনিয়ম থাকে তবে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করার উপদেশ দেওয়া হচ্ছে।

 আপনার বাচ্চার ধীর গতিতে ওজন বাড়ার সবচেয়ে বড় লক্ষণগুলির একটি হল তার অসুস্থ থাকা। যদি তাদের ফ্লু এর মতো লক্ষণগুলি দেখা যায় তবে আপনার খাওয়ানোর সময় বাড়ানোর বা অতিরিক্ত সেশন যুক্ত করার প্রয়োজন হতে পারে। এর কারণ হল অসুস্থ থাকার সময় তারা অসুস্থতা মোকাবিলা করার মতো এবং ওজন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার মতো পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না।

 

☆ শিশুদের ধীর ওজন বৃদ্ধি নির্ণয় করা:

 চিকিৎসকরা শিশুদের দেরী করে ওজন বাড়া নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণ কয়েকটি হল:

 ১. আপনার বাচ্চা যদি তাদের বৃদ্ধির চার্টের নিম্ন শতকরায় থাকে:

 পূর্বে উল্লিখিত ডাব্লুএইচএও চার্টটি এমন একটি গ্রাফ দেখায় যা পার্সেন্টাইল এবং সেন্টাইল নির্দেশ করে। যদি আপনার শিশুটি ৩%-এর নিচে থাকে তবে এর অর্থ হল ১০০টি শিশুর মধ্যে কেবল ৩টি বাচ্চা আপনার শিশুর চেয়ে ছোট বা সমান আকারের হতে পারে। বাচ্চাদের ধীর ওজন বাড়া নির্ণয়ের এটি দ্রুততম উপায়।

 ২. আপনার শিশুর চেক-আপ বা তাদের দ্বি-সাপ্তাহিক ওজন:

 যদি দ্বি- সাপ্তাহিক ওজন নেওয়া গুলির মধ্যে বেশি ওজন অর্জন না করে তবে তারা অপুষ্টিতে আক্রান্ত থাকতে পারে।

 ৩. ধীর ওজন বৃদ্ধির কোনও চিকিৎসাগত কারণ আছে কিনা তা রক্ত পরীক্ষা থেকে জানা যেতে পারে:

 চিকিৎসকরা প্রায়ই এই রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতির পরামর্শ দেওয়ার আগে একটি অপেক্ষা এবং লক্ষ্য রাখার পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। এই ধরণের রক্ত পরীক্ষা আপনার সন্তান যে লক্ষণগুলি দেখায় তার উপর নির্ভর করে এবং কেস ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।

 চিকিৎসকরা আপনার পারিবারিক ইতিহাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন যাতে তারা তদন্ত করতে পারেন যে কোনও অন্তর্নিহিত জেনেটিক বা বংশগত অবস্থা আছে কিনা যা পরীক্ষা করার প্রয়োজন যেটি ধীর ওজন বাড়ার জন্য দায়ী।

 

☆ বাচ্চাদের কম ওজন বৃদ্ধির জটিলতা:

 যদি বাচ্চাদের কম ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ না করা হয় বা কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে এ জাতীয় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে:

 • হৃদপিণ্ড জনিত সমস্যা

• বৃদ্ধির অস্থিতিশীলতা

• অপুষ্টি

• প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়া

• দুর্বল পেশী কাঠামো

• শক্তির অভাব

• জ্বর

 

☆ আপনার শিশুর ওজন বাড়াতে আপনি কী করতে পারেন?

 আপনার শিশুর ওজন ধীরে ধীরে এবং একটি টেকসই পদ্ধতিতে বাড়ানো উচিত। আপনার বাচ্চার সঠিক ধরণের ওজন বৃদ্ধির জন্য আপনি করতে পারেন এমন কয়েকটি জিনিস এখানে দেওয়া হল।

 

◆ চিকিৎসা:

 আপনার শিশুর ওজন উন্নত করতে সহায়তা করার জন্য প্রচুর চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, সাধারণ কয়েকটি হল:

 খাওয়ানোতে সহায়তার জন্য স্তনবৃন্তের ঢাল ব্যবহার করা। একটি ড্রপার বা বোতলের মাধ্যমে বাইরে থেকে খাওয়ানো।এটিষগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টদের দ্বারা নির্ধারিত ওষুধ।ডায়েটিশিয়ানদের দ্বারা পরিপূরকগুলি নির্ধারিত হতে পারে।

 

◆ ঘরোয়া প্রতিকার:

 কখনও কখনও অপেক্ষা করা এবং লক্ষ্য রাখার পদ্ধতি গ্রহণ করা শিশুর ওজন বৃদ্ধির পক্ষে সেরা হতে পারে। চিকিৎসক অবশ্য আপনার শিশুর ওজন বাড়ানোর প্রয়োজন দ্রুত বুঝতে পারবেন তবে ওষুধের পরামর্শ না দিতে পারেন। ঘরোয়া প্রতিকারের সর্বোত্তম রূপটি হল আপনি আপনার বাচ্চাকে খাওয়ানোর সংখ্যা বা আপনার শিশুকে খাওয়ানোর সময়টি বাড়িয়ে তুলুন। শিশু খেতে না চাইলে তাকে জোর না করে অথবা তার উপর চাপ প্রয়োগ না করে ধৈর্য্য সহকারে হাতে সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে বিভিন্ন প‍দ্ধতিতে তাকে খাওয়ানো চেষ্টা করে যেতে হবে।

পর্ব- চার

 ☆ ধীর গতিতে ওজন বৃদ্ধি কি দীর্ঘমেয়াদে আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলবে?

 যদি এর চিকিৎসা না করা হয়, তবে ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি পূর্বে যেমন উল্লিখিত হয়েছে তেমন বড় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। আপনার বাচ্চা অপুষ্টিতে আছে কিনা এবং চিকিৎসক কোনও চিকিৎসার পরামর্শ দেন কিনা তা দেখার জন্য আপনাকে ডাক্তারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে, আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই কারণ শিশুদের দুর্বল ওজন বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করার অসংখ্য উপায় রয়েছে যা উপরে উল্লিখিত হয়েছে। আপনার শিশুকে সঠিক ধরণের পুষ্টি পেতে সহায়তা করার জন্য আরও বিভিন্ন কৌশল এবং চিকিৎসার জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

 

☆ আপনার শিশু কি স্তন্যপান করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে?

 প্রথম ৩ মাসে, যদি আপনার শিশুকে একচেটিয়া একভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো হয়, তবে কিছু লক্ষণ রয়েছে যা আপনাকে শনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারে যে বুকের দুধ থেকে শিশুর ওজন পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়ছে কি না:

 ▪ আপনাকে তার ডিসপোজজেবল ডায়াপার একদিনে পাঁচ থেকে ছয় বার পরিবর্তন করতে হবে।

 ▪ কাপড়ের ডায়াপার ব্যবহার করলে, আপনাকে দিনে সাত থেকে আট বার তাদের ডায়াপার পরিবর্তন করতে হবে।

 ▪ তারা আপনার স্তন চোষার জন্য লড়াই করতে পারে এবং তাদের চোয়ালগুলি স্বাভাবিকের চেয়ে আরও বেশি করে নড়তে পারে। যার থেকে চোষার শব্দ হয় বা কখনও কখনও এমনকি জোরে জোরে গেলার শব্দ শোনা যায়।

 ▪ যদি স্তনগুলি কোমল বোধ না হয় এবং আগের তুলনায় সেগুলি বেশি নরম না বলে মনে হয় তবে এটি ইঙ্গিত হতে পারে যে আপনার বাচ্চা স্তনকে আঁকড়ে ধরতে পারছে না, এটি একটি লক্ষণ যে শিশুটি আগের মতো খেতেও পারছে না।

 ▪ যদি নিয়মিত ওজন করানোর সময় দেখা যায় যে, প্রথম তিন মাস পরে তার ওজন বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেছে তবে এটি খারাপ পুষ্টির লক্ষণ।

 

☆ কখন চিকিৎসা পরামর্শ নেবেন?

 এটি বাঞ্ছনীয় যে আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার সন্তানের ওজন বৃদ্ধির অক্ষমতার বিষয়ে চিকিৎসার পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এগুলি আরও জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। আতঙ্কিত হবেন না, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পুষ্টিগত এবং রুটিন পরিবর্তনের মাধ্যমে ঠিক করা যেতে পারে।

 ওজন বৃদ্ধি দু'ভাবেই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, একটি শিশুর খুব বেশি ওজন বৃদ্ধি হতে পারে বা আরেকটি হচ্ছে তাদের ওজন বাড়াতে যথারীতি লড়াই করতে হতে পারে। আপনি বাচ্চাকে যে জাতীয় খাদ্য খাওয়ান নির্বিশেষে তার উপর ভিত্তি করে এটি হতে পারে। শিশুর ওজনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এমন একটি বিষয় যা প্রতিটি পিতামাতার লক্ষ্য করা উচিত।

 অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় শিশু ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করছে কিন্তু সে অনুযায়ী ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে না। এক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই। শিশু যদি তার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি পেয়ে থাকে তাহলে এটি নিয়ে ভয় পাবার বা আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। সাধারণত যে সকল শিশু অতিরিক্ত চঞ্চল তাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বেশি দেখা যায়। মনে রাখতে হবে শিশুকে খাবার খাওয়ানোর মূল কারণ হচ্ছে শিশুকে সুস্থ রাখা, তার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো সরবরাহ করা। ওজন বৃদ্ধি করা নয়।

 জন্মের পর শিশুরা যে হারে বাড়ে, দুই বছর বয়স পেরোনোর পর আর সেই হারে বাড়ে না। আসলে এটা কোনো সমস্যা নয়। জন্মের পর প্রথম ছয় মাসে শিশুর ওজন প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার কথা। আর এক বছর পর তিন থেকে চার গুণ। এরপর কিন্তু ওজন অত দ্রুত বাড়ে না। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম, তাই দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে দুশ্চিন্তা আর বিভ্রান্তির সবচেয়ে বড় কারণ হলো, শিশুর ওজন সম্পর্কে মায়েদের সঠিক ধারণার অভাব। সেই ধারণা দিতে বয়স অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত, তা এখানে তুলে ধরা হলো:

 এই তালিকা দেখে শতাংশ বের করুন। শিশুর আদর্শ ওজনকে ১০০ শতাংশ ধরে ঐকিক নিয়মে যে কেউ শতাংশ বের করতে পারবেন। শিশুর ওজন আদর্শ ওজনের ৮০ শতাংশের কম হলে তাকে মোটামুটি অপুষ্টি বলে আর ৬০ শতাংশের কম হলে মারাত্মক অপুষ্টি বলে ধরে নিতে হবে। আর তা না হলে শিশু যদি হালকা-পাতলাও হয়, বুঝতে হবে আপনি অহেতুক দুশ্চিন্তা করছেন। ওজন বৃদ্ধি না পেলেও আপনার শিশুটি সুস্থ রয়েছে।