"যে পাঁচটি খাবার কখনওই আপনার ছোট্ট সোনামণিকে দেওয়া যাবে না"

"যে পাঁচটি খাবার কখনওই আপনার ছোট্ট সোনামণিকে দেওয়া যাবে না"

মানুষের মৌলিক চাহিদা গুলোর মধ্যে খাদ্য অন্যতম। বেঁচে থাকার জন্য সকল প্রাণীর ক্ষেত্রেই খাদ্য অতীব প্রয়োজনীয়। খাবার ছাড়া কোনো প্রাণীই বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে না। শিশুদেরও জন্মের পর থেকেই খাদ‍্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়। কিন্তু আপনার সোনামণিটির জন্য সব ধরনের খাবার প্রযোজ্য নয়। যে সকল খাবার খাওয়ানোর ফলে আপনার ছোট্ট সোনামণির স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন হতে পারে সে সকল খাবারের সম্পর্কে জানান হলো -

 ▪১. মধু: মধুর কথা দিয়ে যখন বিষয়টা শুরু হল, তখন প্রথমেই বলে নেওয়া যাক, কেন এটা শিশুর জন্য ক্ষতিকারক। চিকিৎসকদের মতে বহু পরিবারেই শিশুদের ছোটবেলায় মধু খাওয়ানোর রেওয়াজ আছে। কিন্তু এটা একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি না। এবং এতে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।

☆ কেন ক্ষতিকর:

মধুতে একটি বিশেষ উপাদান থাকে, যার নাম ক্লসট্রিডিয়াম বোটুলিনাম (Clostridium botulinum। যা একটি ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়। সেই ব্যাকটেরিয়া শিশুর শরীরে বোটুলিজম নামক রোগের সৃষ্টি করতে পারে। তবে শিশুর বয়স এক বছর পেরিয়ে গেলে এই রোগের আশঙ্কা কমতে থাকে। তখন তাকে অল্প অল্প করে মধু দেওয়া যেতে পারে।

 

◆ কী করতে হবে:

বাচ্চাকে চুসির মধ্যে দেওয়ার জন্য মধুর কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু বাচ্চার মুখ মিষ্টি রাখতে তাকে সামান্য কলা চটকে দেওয়া যেতে পারে। তবে তার আগেও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো।

▪২. লজেন্স, ক‍্যান্ডি এবং চকোলেট:

লজেন্স, টফি বা চকোলেট বাচ্চার জন্য খুবই ক্ষতিকারক। বিশেষ করে জেলি জাতীয় লজেন্স। ললিপপ জাতীয় লজেন্সও শিশুদের না দেওয়াই ভালো।

☆কেন ক্ষতিকর:

লজেন্স, টফি বা চকোলেটে থাকা চিনি মুখের মধ্যে এক ধরনের অ্যাসিড উৎপাদন করে, যা দাঁতের অ্যানামেলের খুব ক্ষতি করে। যে ধরনের লজেন্স মুখের মধ্যে অনেক ক্ষণ ধরে থাকে, তাতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।

◆ কী করতে হবে:

শিশুর দাঁতের এবং মুখের যত্ন নিতে এসব লজেন্স থেকে তাকে দূরে রাখুন। যদি একান্তই না পারেন, তা হলে অন্য খাবার খাওয়ানো হচ্ছে, এমন সময় বা খাওয়ানোর শেষে তাকে এই জাতীয় লজেন্স বা টফি দিন। মনে রাখবেন, সে যেন মুখে জমিয়ে রেখে এই চকোলেট না খায়। তাকে বোঝান, খুব দ্রুত খেয়ে শেষ করে নিতে হবে এই চকোলেট। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা, লজেন্স, টফি, চকোলেট বা অন্য কোনও ধরনের মিষ্টি খাওয়ার পর অবশ্যই যেন তার দাঁত মাজানো হয়। ব্রাশ করলে মুখে এই চিনির পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়।

 ▪৩. চিপস এবং তেলেভাজা খাবার :

এক বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য চিপস বা তেলেভাজা খাবার ভয়ানক ক্ষতিকারক। এই ধরনের খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে এবং লবণের মাত্রা বিপুল হয়। যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।

☆কেন ক্ষতিকর:

চিপস বা প্যাকেটের স্ন্যাকস-এ বিপুল পরিমাণে লবণ থাকে। আর কড়া ভাজা খাবার, যেমন সিঙাড়া বা চপে থাকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। একই কথা জিলিপি বা অন্য ভাজা মিষ্টির জন্যও প্রযোজ্য। এই দুটো জিনিসই শিশুর পক্ষে হজম করা কঠিন। তা ছাড়া এই ধরনের খাবার পেটের মধ্যে অনেক জায়গা দখল করে ফেলে। ফলত পুষ্টিকর খাবার ধারণ করার মতো জায়গা কমে যেতে পারে আপনার সোনামণির পেটে। তার খিদে কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

◆ কী করতে হবে:

শিশুর প্রতিদিন এক গ্রামের মতো লবণ দরকার। ফলে এই জাতীয় স্ন্যাক্স দেওয়ার কোনও অর্থই হয় না। বরং শিশুর স্বাদ বদলের জন্য টাটকা ফল টুকরো করে কেটে তাকে স্ন্যাক হিসেবে দিন। তার বয়স এক বছরের বেশি হয়ে গেলেও চেষ্টা করুন, তাকে এই সব খাবার থেকে দূরে রাখতে।

▪৪. কোমল পানীয় এবং ফ্রুট জুস:

সফট্ ড্রিংক এবং প্যাকেটের ফ্রুট জুস আপনার সোনামণির জন্য খুবই ক্ষতিকারক। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। এই অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যাসিড এবং চিনি শিশুকে রীতিমতো অসুস্থ করে ফেলতে পারে।

 ☆ কেন ক্ষতিকারক:

সোডা জাতীয় পানীয় বা প্যাকেটের ফ্রুট জুসে অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি এবং অ্যাসিড থাকে। যা আপনার সোনামণির দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তবে সেটাই একমাত্র কারণ নয়, এই ধরনের পানীয় অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যালোরি সমৃদ্ধ হয়। ফলে এই ছোট বয়সেই আপনার সোনার শরীরে জমতে পারে বিপুল পরিমাণে মেদ। যা পরবর্তী কালে তার হৃদযন্ত্রের সমস্যা ডেকে আনতে পারে।

 ◆ কী করতে হবে:

এই জাতীয় পানীয় থেকে আপনার সোনামণিকে যতোটুকু সম্ভব দূরে রাখুন। আপনার শিশুকে ফলের রস খাওয়াতে চাইলে, সরাসরি তাজা ফল থেকে রস বের করে নিন। সেটাও বেশিক্ষণ রেখে দিবেন না। রস বের করার পরেই ওটা ওকে খাইয়ে দিন। কোন কোন ফলের রস ওকে দেওয়া যাবে, সেটা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। আর আপনার ছোট্ট সোনামণিটির জন্য কোমল জাতীয় পানীয় কখনওই নয়।

 ▪৫. গরুর দুধ:

সবাই জানেন, শিশুদের জন্য মায়ের দুধের কোনও বিকল্প হয় না। কিন্তু বাচ্চা একটু বড় হওয়ার পরে অনেকেই তাঁদের বাচ্চাকে গরুর দুধ দিতে চান। কিন্তু এটা মোটেও সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।

 ☆ কেন ক্ষতিকারক:

মায়ের দুধে পুষ্টিগুণের পাশাপাশি নানা ধরনের এনজাইম থাকে, যা শিশুর বড় হয়ে ওঠার জন্য খুবই দরকারি। এই জন্যই চিকিৎসকরা বলেন, বাচ্চার জন্য মায়ের দুধ সুষম খাবার। সেখানে গরুর দুধে অতিরিক্ত পরিমাণে ল্যাকটোজ থাকে, শিশুদের জন্য যা একেবারেই ভালো নয়। এই অতিরিক্ত ল্যাকটোজ পেটের সমস্যা ডেকে আনতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা, এই দুধ বাচ্চার কিডনির ক্ষতি করতে পারে। শরীরে আয়রনের ঘাটতি হওযার আশঙ্কাও থাকে এ সব ক্ষেত্রে।

 ◆ কী করতে হবে:

চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার সোনামণির জন্য দুধ বাছুন। কতদিন পর্যন্ত সে মায়ের দুধ খাবে, কখন থেকে অন্য খাবার খেতে পারবে, সেটা বলতে পারবেন একমাত্র বিশেষজ্ঞরাই। আপনার সোনামণি কতটা বড় হলে, তাকে অন্য দুধ দেওয়া যাবে, সেটাও জেনে নিন চিকিৎসকের থেকেই।

 অনেক সময়ই পরিস্থিতির কারণে নিয়ম মেনে শিশুদের খাওয়ানো যায় না। কখনও কখনও ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি হয়ে যায়। বা এমন কোনও খাবার শিশুরা খেয়ে ফেলে, যেগুলো তাদের খাওয়ার কথা না। অনেক সময় শিশুরা এইসব খাবার খাওয়ার জন্য অনেক জেদ করে থাকে। সত‍্যি বলতে এসব খাবারই শিশুদের জন্য অনেক বেশি লোভনীয় ও আকর্ষণীয়। বাচ্চাদের এইসব জিনিস থেকে দূরে রাখাটা অনেকটাই কষ্টসাধ্য। কিন্তু আপনার সন্তানের ভালোর জন্যই শত কষ্ট হলেও তাকে এইসব খাবার থেকে দূরে রাখতে হবে।

অনেক পরিবারেই দীর্ঘদিনের রেওয়াজ বাচ্চাদের একদম ছোট থেকে মধু খাওয়ানোর। কিন্তু এটা নাকি মোটেই ঠিক কথা নয়। ডাক্তারের মতে, এ সব সেকেলে যুগের ধারণা। বর্তমান চিকিৎসা-বিজ্ঞান বলছে, মধু থেকে বাচ্চাদের ফুড পয়জন এর মতো সমস্যাও হতে পারে। তবে শুধুমাত্র মধু নয়, এমন আরও অনেকগুলো খাবার রয়েছে, যা বাচ্চাদের অবলীলায় দিয়ে দেন তাদের বাবা-মা বা পরিবারের মানুষ। কিন্তু এগুলো চরম ক্ষতি করতে পারে বাচ্চার। বাচ্চাকে কখনওই দেওয়া যাবে না।

আপনার সোনামণিটিকে সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর এবং সঠিক খাবার নির্বাচন করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাবারই পারে আপনার ছোট্ট সোনামণির স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধিসাধন করতে। তাই এ সব ক্ষেত্রে দেরি না করে, যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া দরকার। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করে শিশুকে সে অনুযায়ী বড় করে তোলাই বাবা মায়ের দায়িত্ব।