"শিশুর খেলনা ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনি কতটা সতর্ক?"

"শিশুর খেলনা ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনি কতটা সতর্ক?"

জন্মের পর থেকে যে কোনো শিশুর খেলার প্রথম সাথী হচ্ছে তার খেলনা। এই খেলনা শিশুর জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। তাই খেলনা ক্রয়ের সময় কিছু জিনিসের উপর বিশেষ নজর দেয়া উচিত। চলুন এই সম্পর্কে জেনে নিই।

 ◆যে কোনো খেলনা ক্রয়ের পূর্বে প্যাকেটের লেবেলটি ভালোভাবে পড়ে নিন। খেলনাটি কত বছরের শিশুর খেলার উপযুক্ত এবং কীভাবে ব্যবহার করতে হবে এসব তথ্য লেবেল থেকে নিশ্চিত হয়ে নিন।

 ◆শিশুরা কিছু পেলেই সেটা মুখে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাই খেলনা বা খেলনার অংশ যেন শিশুর হাঁ-মুখের চেয়ে ছোট না হয়, ব্যাপারটি বিবেচনায় রাখুন।

 ◆উচ্চ স্বরে শব্দ হয় এমন খেলনা না কেনাই ভালো। শিশুর শ্রবণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

 ◆শূন্যে ছুঁড়ে দেওয়া যায় এমন খেলনা শিশুর হাতে দেওয়া ঠিক না। চোখে আঘাত লেগে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

 ◆কাপড়ের পুতুল বা এ জাতীয় খেলনা কেনার আগে দেখে নিন ময়লা হলে যাতে সহজেই ধোয়া যাবে কি না, সেলাই ঠিকঠাক আছে কি না।

 ◆প্লাস্টিকের খেলনা কেনার আগে দেখে নিন কোনো অংশ ধারালো কি না। এর রং শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কি না।

 ◆অধিকাংশ শিশুই খেলনা ভালোবাসে। কিছু খেলনায় শিশুর জ্ঞান বাড়ে, মস্তিষ্ক প্রখর হয়। রঙিন খেলনায় শিশুর দৃষ্টিশক্তির বিকাশ ঘটে। তবে কিছু খেলনা আছে যেগুলো শিশুর জন্য বিপজ্জনক। যেমন-

 ১. ব্যাটারিচালিত খেলনাগুলো শিশুদের বেশ পছন্দের হলেও যদি শিশু ঘটনাক্রমে ছোট কোনো খেলনা মুখে দেয় তবে শ্বাসরোধের মতো জটিল সমস্যাও হতে পারে।

 ২. শিশু যেন দ্রুত দাঁড়ায় এবং হাঁটে সে জন্য বাবা-মায়েরা বেবি ওয়াকার কিনে দেন। কিন্তু এটি দেখতে সহজ মনে হলেও শিশুর জন্য বেশি নিরাপদ নয়। দ্রুত চলতে গিয়ে ওয়াকারের চাকা উল্টে গেলে বা কোথাও ধাক্কা লাগলে বড় আঘাত পেতে পারে শিশু।

 ৩. ছোট কোনো খেলনা বা গাড়ির যন্ত্রাংশ বা পুতুলের বিভিন্ন অংশ শিশুর নাক বা মুখের ভেতরে আটকে যেতে পারে। তাই শিশুর খেলার সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত।

 ৪. অনেক বাবা-মা শিশুর জন্য ক্রিব বাম্পার আরামদায়ক এবং সুরক্ষিত বলে মনে করেন। তবে এই নরম প্যাডগুলোও শিশুর শ্বাসরোধের কারণ হতে পারে। যদি শিশু শোয়ার সময় তার পজিশন পাল্টাতে চায় তখন নাক-মুখ আটকে তার শ্বাসরোধ হতে পারে।

 

◆অনেকেই বাচ্চার হাতে রেসিং কার, পিস্তল বা বন্দুক, ছুরি জাতীয় খেলনা তুলে দেন। নাজিফা ফেরদৌসীর পরামর্শ হলো—বাচ্চাদের এ ধরনের ধ্বংসাত্মক খেলনা না দেওয়া ভালো। কারণ এগুলো শিশুর মনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিতে পারে। এ ধরনের খেলনা শিশু মনে এক ধরনের আগ্রাসী মনোভাব তৈরি করতে পারে। ফলে এসবের পরিবর্তে খেলনা মোবাইল, হেলিকপ্টার, ডক্টর সেট ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।

 ◆শিশুর জন্য অটোমেটেড খেলনা পরিহার করাই ভালো। কারণ এ ধরনের খেলনা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কাজ করে বলে এতে বাচ্চার কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটে না। শিশুর জন্য এমন খেলনা কিনুন যেটাতে তার নিজের কিছু করার সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে লেগো সেট, আর্কিটেকচার সেট, বিভিন্ন রকমের পাজল, বার্বি সেট, কিচেন সেট, মেকিং টয়, ডলস হাউস হতে পারে ভালো বিকল্প।

 ◆সহজে অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে এমন খেলনা বাদ দিন। ব্যাটারিচালিত খেলনা পরিহার করা ভালো। কারণ এ ধরনের খেলনা থেকে তৈরি হওয়া শব্দ শিশুর মস্তিষ্কে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমন খেলনা বাছাই করুন, যা শিশু ইচ্ছামতো মজা করে খেলতে পারে। যেমন—ভবন নির্মাণসামগ্রীর আদলে বানানো খেলনা, ব্লক ইত্যাদি।

 

মনে রাখতে হবে খেলার সঙ্গে শিশু যে বিষয়টি শেখে তা বহু দিন শিশুর মস্তিষ্ককে পরিচালনা করে। খুব বেশি নড়াচড়া করে এমন খেলনাও দিতে পারেন। তাতে বাচ্চার শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস তৈরি হবে। অতিরিক্ত খেলনা কিনে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। বহু খেলনা থাকলে শিশু সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, যা তাকে এক রকম বিব্রত করে। যেহেতু খেলনা একটি শিশুর জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে তাই ক্রয়ের সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা একান্ত জরুরি।