প্রেসিডেন্টের নামে নাম তার, সবাই ডাকে ‘টেডি বিয়ার’!

প্রেসিডেন্টের নামে নাম তার, সবাই ডাকে ‘টেডি বিয়ার’!

 খেলনার দোকানে গেলেই নানারকম খেলনা দেখতে পাওয়া যায়। তবে এই যে জনপ্রিয় এতোশত খেলনা, এদের প্রত্যেকের পেছনেই কিন্তু আছে অজানা সব গল্প।

১৯০২ সালের ১৪ই নভেম্বর। তখনো পৃথিবীটা ঠিক আজকের পৃথিবী ছিল না। পৃথিবীজুড়ে ছিল অনেক অনেক অনেক বিরল প্রাণী। শিকারে গিয়ে ভাল্লুক হত্যা করা ছিল খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। বিশেষ করে সেটা যদি হয় আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রপতির শিকার, তাহলে তো কোন কথাই নেই!

তবে বরাবর যেটা হয়ে এসেছিলো সে বছর শিকারে ঘটলো তার উল্টোটা। প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্টের সাথে শিকারে গিয়েছিলেন আরো অনেকেই সেদিন। প্রেসিডেন্টকে শিকারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন খোদ মিসিসিপির গভর্নর অ্যান্ড্রু এইচ লঙ্গিনো।

বেশ চলছিলো শিকার কার্যক্রম। মিসিসিপির অনওয়ার্ডের কাছের জঙ্গলে শিকারিরা প্রচুর শিকার পাচ্ছিলেন। কিন্তু কেন যেন প্রেসিডেন্ট সেবার কোন শিকারই পেলেন না। তাই শেষমেশ প্রেসিডেন্টের কথা মাথায় রেখে তার অ্যাসিস্টেন্ট স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হল্ট কুলিয়ারের সাথে মিলে একটি কালো ভাল্লুক পাকড়াও করেন।

ভাল্লুকটিকে একটি উইলও গাছের সাথে শক্তভাবে বেধে রাখা হয়। আর তারপর প্রেসিডেন্টকে ভাল্লুকটিকে শিকার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। রুজভেল্ট হাতে বন্দুকও তুলে নিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত এই পুরো ব্যাপারটাকেই তার খুব নেতিবাচক মনে হয়। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে জানান রুজভেল্ট যে, এই ভাল্লুককে তিনি শিকার করবেন না।

একটু সময় যেতে না যেতেই বিদ্যুৎবেগে প্রেসিডেন্টের ভাল্লুককে ছেড়ে দেওয়ার এই খবর সবখানে ছড়িয়ে পড়ে। পত্রিকার পাতায় পাতায় জায়গা করে নেয় খবরটি। অন্যদের বেলায় যে হইচই হয়তো বা হতো না, প্রেসিডেন্টের বেলায় সেটা যেন একদম জাদুর মতো কাজ করলো। তিনি হয়ে গেলেন সেই প্রেসিডেন্ট, তিনি ভাল্লুককে গুলি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন!

প্রেসিডেন্টকে নিয়ে লেখা এই খবরগুলো চোখে পড়ে রাজনৈতিক কার্টুনশিল্পী ক্লিফোর্ড বেরিম্যানের। ভাল্লুককে গুলি না করার এই ঘটনাটিকে তিনি হাস্যরসাত্মকভাবে একটু কার্টুনে তুলে ধরেন। ১৯০২ সালের ১৬ই নভেম্বর ওয়াশিংটন পোস্টে ছাপা হয় এই কার্টুন। আরো অনেকের মতো কার্টুনটি খুব ভালো লাগে ব্রুকলিনের স্থানীয় ক্যন্ডি দোকানের মালিক মরিস মিখটোমের।

তিনি পেশার চকোলেট বিক্রেতা হলেও স্ত্রী রোজের সাথে মিলে প্রায়ই পুতুল তৈরি করতেন মরিস। কার্টুনটি দেখার পর প্রেসিডেন্টের সম্মানে একটি পুতুল ভাল্লুক বানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যেমন চিন্তা তেমন কাজ! দ্রুত মরিস ও তার স্ত্রী মিলে ভাল্লুকের পুতুল তৈরি করে ফেলেন। প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্টের ডাকনাম ছিল টেডি। নিজের জন্য নামটা পছন্দ করতেন না খুব একটা প্রেসিডেন্ট। তবে তার এই নামটাকে নিয়েই ভাল্লুকের নাম টেডি বিয়ার রাখেন মরিস।

প্রেসিডেন্টের নাম গ্রহণের সম্মতি নিয়েই এই খেলনা ভাল্লুক বিক্রি করা শুরু করেন মরিস। আর খুব দ্রুত খেলনাটি এতো বেশি পরিচিত হয়ে যায় যে এই কাজের জন্য একটি খেলনা কোম্পানিই বানিয়ে ফেলেন তারা।

সময়ের সাথে সাথে রঙ, উচ্চতা, উপাদান এবং অন্যান্য আরো দিক দিয়ে টেডি বিয়ার বদলে যেতে শুরু করে। প্রাথমিকভাবে পুতুলটির সাথে আসল ভাল্লুকের চেহারার অনেক বেশি মিল রাখা হলেও পরবর্তীতে নাক ছোট, আদরমাখা চোখের মিষ্টি টেডি বিয়ার উৎপাদন করা শুরু হয়। প্রথম টেডি বিয়ারে মোহাইর পশম ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে একে একে নানারকম কাপড়, এই যেমন- ডেনিম, কটন, সাটিন, ক্যানভাসসহ আরো নানাবিধ তন্তু ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে।

যদিও টেডি বিয়ারকে সবসময় ভাল্লুকের ছোট বাচ্চার আদলেই তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের সবখানে ছড়িয়ে রয়েছে টেডি বিয়ার। টেডি বিয়ারকে নিয়ে গান হয়েছে অনেক, গল্প লিখেছেন অনেকে। হয়েছে টেডি বিয়ার পিকনিক, টেডি বিয়ার জাদুঘরসহ আরো কতশত ব্যাপার। সেদিনের সেই ছোট্ট বিয়ার যে তো সফল হবে কে ভেবেছিলো! স্বয়ং প্রেসিডেন্টও কি টের পেয়েছিলেন কিছু? হয়তো; হয়তো না!